লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯ > পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭ > পর্ব ৪৮ > পর্ব ৪৯ > পর্ব ৫০ > পর্ব ৫১ > পর্ব ৫২ > পর্ব ৫৩ > পর্ব ৫৪ > পর্ব ৫৫ > পর্ব ৫৬ > পর্ব ৫৭ > পর্ব ৫৮ > পর্ব ৫৯ > পর্ব ৬০ > পর্ব ৬১ > পর্ব ৬২ > পর্ব ৬৩ > পর্ব ৬৪ > পর্ব ৬৫ > পর্ব ৬৬ > পর্ব ৬৭ > পর্ব ৬৮ > পর্ব ৬৯ > পর্ব ৭০ > পর্ব ৭১ > পর্ব ৭২ > পর্ব ৭৩ > পর্ব ৭৪ > পর্ব ৭৫ > পর্ব ৭৬ > পর্ব ৭৭ > পর্ব ৭৮ > পর্ব ৭৯ > পর্ব ৮০ > পর্ব ৮১ > পর্ব ৮২ > পর্ব ৮৩ > পর্ব ৮৪ > পর্ব ৮৫ > পর্ব ৮৬
আদি উৎসের নিবেদিতপ্রাণ বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই বর্ণনার আলোকে মক্কাবাসী কুরাইশদের সঙ্গে স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীদের সংঘটিত তৃতীয় ও শেষ যুদ্ধটির (খন্দক যুদ্ধ) বিশদ আলোচনা গত দশটি (পর্ব: ৭৭-৮৬) পর্বে করা হয়েছে।
তাঁদেরই বর্ণনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণে যে–বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো মদিনায় তখনও অবশিষ্ট তৃতীয় ও শেষ সম্পদশালী ইহুদি বনি কুরাইজা গোত্রের লোকেরা চুক্তিভঙ্গ করে খন্দক যুদ্ধকালে মিত্রবাহিনীকে সাহায্য করেছিলেন, এমন দাবি সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ তাঁর ৬২ বছরের (৫৭০-৬৩২ খৃষ্টাব্দ) জীবদ্দশায় যে–সবমানবতাবিরোধী নৃশংস অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন,তার সবচেয়ে জঘন্যটি হলো “বনি কুরাইজা গণহত্যা”!
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে ৬২৭ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে বনি কুরাইজা গোত্রের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের এক এক করে গলা কেটে করা হয় খুন। তাঁদের মা-বোন-স্ত্রী-কন্যাদের ভাগাভাগি করে করা হয় যৌনদাসীতে রূপান্তর ও ধর্ষণ।তাঁদের অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের করা হয় দাসে পরিবর্তন ও ভাগাভাগি। তাঁদের সমস্ত সম্পত্তি করা হয় লুণ্ঠন এবং পরবর্তীতে এই দাসীদের অনেককে নাজাদ অঞ্চলে (মধ্য সৌদি আরব অঞ্চল) নিয়ে গিয়ে করা হয় বিক্রি ও সেই উপার্জিত অর্থে ক্রয় করা হয় যুদ্ধের জন্য অস্ত্র-শস্ত্র ও ঘোড়া।
এই জঘন্য অপরাধে অপরাধী হওয়া সত্ত্বেও আজকের পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ প্রকৃত ইতিহাস জেনে অথবা না জেনে (অধিকাংশ মানুষই এই দলে) মুহাম্মদকে “মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ” হিসাবে আখ্যায়িত করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই মানুষটির আদর্শ অনুসরণ, প্রচার ও প্রসারের ব্রতে ব্রতী।
গণহত্যার নায়ককে মহামানব রূপে প্রতিষ্ঠিত করার বাহন হলো শক্তিশালী প্রোপাগান্ডা মাধ্যম (পর্ব- ৪৩); হুমকি-শাসানী-ভীতি প্রদর্শন (পর্ব: ২৬-২৭); মিথ্যাচার, দমন, নিপীড়ন, ত্রাস-হত্যা-হামলা – যার আলোচনা গত ষাটটি পর্বে করা হয়েছে।
প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে “নায়কের” যাবতীয় নেতিবাচক কর্ম ও চরিত্রকে গোপন রাখা, আর তা সম্ভব না হলে বিভিন্ন কলা-কৌশলের মাধ্যমে তার বৈধতা প্রদান করা, আর তাও যদি সম্ভব না হয়, তবে প্রশ্ন ও প্রতিবাদকারীকে হুমকি-শাসানী-ভীতি প্রদর্শন, দমন, নিপীড়ন ও প্রয়োজনে খুন করা। শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবৎ এমন পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ইতিহাসের এই নায়কদের যে মহামানব হিসাবে বহুসংখ্যক মানুষের মনে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, তার সবচেয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো “ইসলাম”! (পর্ব- ৪৪)। ইসলামের প্রোপাগান্ডা মাধ্যম এতই শক্তিশালী যে, পৃথিবীর সিংহভাগ মুসলমান ও প্রায় সমস্ত অমুসলমান জনগোষ্ঠীই বনি কুরাইজা, বনি নাদির, বনি কেউনুকা সহ মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের দ্বারা সংঘটিত অসংখ্য পাশবিকতার (Atrocities) ইতিহাস সম্বন্ধে একেবারেই অজ্ঞ। ইন্টারনেট প্রযুক্তি আবিষ্কারের ফলে এই পরিস্থিতির সামান্য কিছু উন্নতি হয়েছে।
মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গর্হিত, নৃশংস, ভয়াবহ ও হৃদয়বিদারক জঘন্য অপরাধের একটি হলো এই ‘বনি কুরাইজা গণহত্যা।‘ তাই সঙ্গত কারণেই এই জঘন্য অপরাধের বৈধতা প্রদানের প্রয়োজনে মুহাম্মদ–অনুসারী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা গত ১৪০০ বছর যাবৎএই উপাখ্যানের বিষয়ে সবচেয়ে বেশী তথ্যবিকৃতি, মিথ্যাচার ও কলা-কৌশল অবলম্বন করে চলেছেন। ইসলামের প্রাথমিক সংজ্ঞা অনুযায়ী তা তাদের অবশ্য কর্তব্য! (পর্ব-১০)।
তাই আমি আদি উৎসের মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই রচিত মুহাম্মদের জীবনীগ্রন্থ (সিরাত), হাদিসগ্রন্থ ও মুহাম্মদেরই রচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থ কুরানের আলোকে এই নৃশংস গণহত্যা উপাখ্যানের প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহ পৃথক পৃথক ভাবে আলোচনা করবো, যাতে:
১) উৎসাহী মুক্তচিন্তার পাঠকরা আদি উৎসে বর্ণিত সিরাত, হাদিস ও কুরানে এই গণহত্যার বিষয়ে “আসলেই কী বর্ণিত আছে”, তা জানতে পারেন ও সেই তথ্য-উপাত্তের নিরপেক্ষ বিশ্লেষণের মাধ্যমে “সেই সময়টিতে সত্যিই কী ঘটেছিল” তা অনুধাবন করতে পারেন;
এবং একই সাথে,
২) মুহাম্মদ–অনুসারী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা কীভাবে আদি উৎসে বর্ণিত এই গণহত্যা উপাখ্যানের “তথ্যবিকৃতি ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে” সাধারণ সরলপ্রাণ মুসলমান ও অমুসলমানদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন, তারও সম্যক ধারণা পেতে পারেন।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনা:
আল-যুহরী আমাকে [মুহাম্মদ ইবনে ইশাক] যা বলেছেন তা হলো:
‘মধ্যাহ্নের নামাজের সময় জিবরাইল এক খচ্চরের পিঠের ওপর বসানো জরির জিনের উপর সওয়ার হয়ে নকশি করা পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় আল্লাহর নবীর কাছে এসে হাজির হয়। সে আল্লাহর নবীর কাছে জানতে চায় যে,তিনি যুদ্ধ পরিত্যাগ করেছেন কি না। জবাবে যখন তিনি বলেন, তিনি তা করেছেন, তখন জিবরাইল তাঁকে বলে যে, ফেরেশতারা এখনও তাদের অস্ত্র পরিত্যাগ করেনি এবং শত্রুর পশ্চাদ্ধাবন করে সে এইমাত্রই এখানে এসেছে।
“হে মুহাম্মদ, আল্লাহ তোমাকে বনি কুরাইজা গোত্রের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের দূর্গ ঝাঁকানোর জন্য ওখানে যাওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত।”
আল্লাহর নবী এই ঘোষণার আদেশ জারি করেন যে, কেউ যেন বনি কুরাইজা গোত্রের কাছে পৌঁছার পূর্বে আছরের নামাজ আদায় না করে।
আল্লাহর নবী আলীকে তার ঝাণ্ডা সহকারে সম্মুখে প্রেরণ করেন, লোকেরা সেখানে দ্রুত অগ্রসর হয়। আলী তাঁর যাত্রা অব্যাহত রাখেন,যে পর্যন্ত না তিনি দুর্গের নিকটবর্তী হন ও শুনতে পান যে, তারা আল্লাহে নবীর বিরুদ্ধে অপমানজনক উক্তি করছে। আল্লাহর নবীর সাথে রাস্তায় সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে তিনি ফিরে আসেন ও তাঁকে বলেন যে, ঐ বদমাশদের কাছে তাঁর যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
আল্লাহর নবী বলেন, “কেন? আমার মনে হয়, তুমি নিশ্চয়ই শুনেছ যে,তারা আমার বিরুদ্ধে কটুবাক্য প্রয়োগ করেছে।”
জবাবে আলী যখন বলেন যে, বিষয়টি তাই, তখন তিনি বলেন, “যদি তারা আমাকে দেখতো,তবে এমন বাজে কথা বলতো না।”
আল্লাহর নবী তাদের কাছে আসেন ও বলেন,
“তোমরা হলে বানর সদৃশ, আল্লাহ কিতোমাদের লাঞ্ছিত করে সমুচিত প্রতিশোধ নেয়নি?”
তারা জবাবে বলে,
“হে আবুল কাশেম, তুমি তো বর্বর নও।”
আল্লাহর নবী বনি কুরাইজা গোত্রের লোকদের নিকট আসার পূর্বে আল-সাওরান নামক স্থানে, তার কিছু অনুসারীদের অতিক্রম করার সময় তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে জানতে চান, কেউ তাদেরকে অতিক্রম করেছে কি না। তারা জবাবে বলে, দিহায়া বিন খালিফা আল-কালবি এক সাদা খচ্চরের পিঠের উপর বাসানো জরির জিনের ওপর সওয়ার হয়ে তাদেরকে অতিক্রম করেছে।
তিনি বলেন, “ঐ লোকটিই ছিল জিবরাইল, বনি কুরাইজার দুর্গকে ঝাঁকুনি ও তাদের লোকদের অন্তরে ভীতি প্রদর্শন করার জন্য তাকে পাঠানো হয়েছে।”
বনি কুরাইজা গোত্রের লোকদের কাছে পৌঁছার পর আল্লাহর নবী তাদের যে–কুপটির কিনারায় এসে সাময়িকভাবে যাত্রা বিরতি দিয়েছিলেন, সেই কুপটির নাম হলো ‘আনার কুপ’; তাঁর লোকেরা সেখানে এসে তাঁর সাথে যোগদান করে। কিছু লোক জোহর নামাজ আদায় করে এসেছিল। তারা আছরের নামাজ আদায় না করেই সেখানে এসেছিল, কারণ আল্লাহর নবীর আদেশ ছিল এই যে, তারা যেন বনি কুরাইজা গোত্রের কাছে পৌঁছার আগে তা আদায় না করে।
তারা যুদ্ধ করার মত প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল; বনি কুরাইজার কাছে আসার পূর্বে তারা আছর নামাজ আদায় করতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করে, কারণ এটিই ছিল নবীর আদেশ। তারা সেখানে পৌঁছার পর আছরের নামাজ আদায় করে।
আল্লাহ তার পাক কিতাবে এই কারণে তাদেরকে কোনো দোষারোপ করেননি, আল্লাহর নবীও তাদেরকে এই কারণে কোনোভর্ত্সনা করেননি। মা’বাদ বিন মালিক আল-আনসারীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমার পিতা ইশাক বিন ইয়াসার আমাকে এই ঘটনাটি বলেছেন।
আল্লাহর নবী তাদেরকে পঁচিশ রাত অবধি চারিদিক থেকে ঘেরাও করে রাখেন, যে পর্যন্ত না পরিস্থিতি তাদের জন্য দুঃসহ হয়ে ওঠে ও আল্লাহ তাদের অন্তরে ত্রাসের সঞ্চার করে।’[1] [2] [3]
ইমাম বুখারীর (৮১০-৮৭০ সাল) বর্ণনা:
সহি বুখারী: ভলুম ৪, বই নম্বর ৫২, হাদিস নম্বর ৬৮:
‘আয়েশা হইতে বর্ণিত: খন্দকের (যুদ্ধ) ঐ দিনটিতে ফিরে আসার পর আল্লাহর নবী তাঁর অস্ত্র নামিয়ে রাখেন ও তাঁর গোসল সম্পন্ন করেন। মাথায় ধুলা ভর্তি অবস্থায় তখন জিবরাইল তাঁর কাছে আসে ও বলে, “তুমি অস্ত্র নামিয়ে রেখেছ! আল্লাহর কসম, আমার অস্ত্র আমি এখনও নামিয়ে রাখিনি।”’
আল্লাহর নবী বলেন, “কোথায় (এখন যেতে হবে)?” জিবরাইল বনি কুরাইজা গোত্রের দিকে নির্দেশ করে ও বলে, “এই দিকে।” তাই আল্লাহর নবী তাদের দিকে রওনা হন।’ [4]
সহি বুখারী: ভলুম ৫, বই নম্বর ৫৯, হাদিস নম্বর ৪৪৯:
‘আল-বারা হইতে বর্ণিত: আল্লাহর নবী হাসান বিন থাবিত–কে বলেন, “(তোমার কবিতার মাধ্যমে) তাদের গালাগাল কর (abus e them), জিবরাইল তোমার সঙ্গে আছে (অর্থাৎ, তোমার সহায়ক)।”’ [5]
(অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ – লেখক।)
>>> মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, আল-তাবারী (৮৩৯-৯২৩ সাল), আল- ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ সাল), ইমাম বুখারি প্রমুখ আদি ও বিশিষ্ট মুসলমান ঐতিহাসিকদেরই ওপরে–বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, স্বঘোষিত আখেরি নবী মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ, তাঁর তিন হাজার সশস্ত্র অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে খন্দক যুদ্ধ শেষ হওয়ার অব্যবহিত পরেই “জিবরাইলের নির্দেশে” অত্যন্ত ত্বরা করে (অনুসারীদের আছর নামাজ পড়ে আসারও অনুমতি ছিল না) বনি কুরাইজা গোত্রের ওপর সশস্ত্র হামলা চালান।
এই অশরীরী জিবরাইল ও তার আদেশ/নির্দেশ একমাত্র মুহাম্মদ ছাড়া অন্য কেউই দেখতে বা শুনতে পান না (Hallucination) – চিকিৎসা শাস্ত্রে এই মানসিক বিভ্রমগুলো কী ধরনের রুগীর উপসর্গ; এই উপসর্গে (Command Hallucination) আক্রান্ত ব্যক্তিরা তার চারিপাশের মানুষদের জন্য কতটা বিপজ্জনক; আধুনিক চিকিৎসকরা এই সমস্ত রুগীর ও তার চারিপাশের মানুষদের নিরাপত্তার খাতিরে জরুরি ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা অবলম্বন করেন এবং “কী কারণে মুহাম্মদ এ ধরণের মানসিক রোগগস্ত লোকদের একজন ছিলেন না” তার আলোচনা “আবু-লাহাব তত্ত্ব” পর্বে (পর্ব-১২) করা হয়েছে।
খন্দক যুদ্ধের গত দশটি পর্বের বিস্তারিত বর্ণায় আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে,প্রায় এক মাস অবধি “কোনোরূপ যুদ্ধ ছাড়াই অবরোধ অব্যাহত থাকে”; মুসলমানরা ছিলেন ভীত-সন্ত্রস্ত! সদলবলে মিত্রবাহিনীর খন্দক অতিক্রমে ব্যর্থ হওয়ার কারণে খন্দকের এপার ও ওপারে তীর নিক্ষেপ ও সামান্য বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া খন্দক যুদ্ধে কোনো বড় ধরনের সংঘর্ষ সংঘটিত হয়নি। মুসলমানদের নিহতের সংখ্যা সর্বমোট ছয় জন। আর মিত্রবাহিনীর নিহতের সংখ্যা সর্বমোট তিন (আমর বিন আবদু উদ্দ, নওফল বিন আবদুল্লাহ ও মুনাববি বিন উসমান- মুনাববি নিহত হন মক্কায় ফিরে যাওয়ার পর) (পর্ব-৮২)।
অর্থাৎ মুসলমান বাহিনী এবং ফেরেশতা জিবরাইল ও অন্যান্য ফেরেশতাকুল অস্ত্রসমেত একমাস অবধি যুদ্ধ করে “তিন জন কুরাইশকে” হত্যা করেছেন। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তার (যদি থাকে) শক্তিমত্তা নিয়ে কী নিদারুণ রসিকতা!
উক্ত বর্ণনায় আরও দাবি করা হয়েছে, আলী ইবনে আবু তালিব বনি কুরাইজা গোত্রের দুর্গের নিকটবর্তী হয়ে শুনতে পান যে, “তারা আল্লাহে নবীর বিরুদ্ধে অপমানজনক উক্তি করছে।” কিন্তু সেই অপমানজনক উক্তিগুলো কী, তার সামান্যতম আভাস কোথাও নাই।
অপরপক্ষে, মুহাম্মদ বনি কুরাইজা গোত্রের নিকট পৌঁছার পর তাদেরকে কী ভাষায় সম্বোধন করেছিলেন, তার বর্ণনা অত্যন্ত সুস্পষ্ট, “”তোমরা হলে বানর সদৃশ…“।
আর তার প্রতিউত্তরে বনি কুরাইজার লোকেরা তাঁকে কী বলেছেন, তাও অত্যন্ত স্পষ্ট, “হে আবুল কাশেম, তুমি তো বর্বর নও।”
শুধু কি তাই! ওপরের বর্ণনায় আমরা আরও জানতে পারি, অসহায় বনি কুরাইজা গোত্রের লোকদের চারদিক থেকে ঘেরাও করে রেখে “তাদেরকে কবিতার মাধ্যমে গালাগাল” করার জন্য মুহাম্মদ তাঁর এক অনুসারীকে নির্দেশ দিয়েছেন! আল্লাহর “রেফারেন্সে” মুহাম্মদ অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যে কী পরিমাণ শাপ-অভিশাপ করেছেন,তা কুরানের পাতায় বর্ণিত আছে – যার আলোচনা “অভিশাপ তত্ত্ব পর্বে” (পর্ব- ১১) করা হয়েছে।
কুরান, সিরাত ও হাদিসের সর্বত্রই এই একই চিত্র আমরা দেখতে পাই।অবিশ্বাসী কাফেররা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের ঠিক কী অত্যাচার করতেন, তার সুনির্দিষ্ট (Specific) উল্লেখ কোথাও নেই (পর্ব: ৫২)।
“আদি বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই বর্ণনার খন্দক যুদ্ধ উপাখ্যানের আলোকে ‘বনি কুরাইজার নারকীয় গণহত্যা তদন্তে’ আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে, বনি কুরাইজার লোকেরা মিত্রবাহিনীকে সাহায্য করেছিলেন, এই দাবির সপক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনোরূপ তথ্য-উপাত্ত ও চাক্ষুষ প্রমাণ কোথাও নেই। তাঁরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের কোনোরূপ আক্রমণ-চেষ্টা কিংবা হত্যা–চেষ্টা করেছেন; কিংবা মিত্রবাহিনীকে কোনোরূপ সাহায্য-চেষ্টা, কিংবা তাদের সাথে সক্রিয় যোগাযোগ-চেষ্টা করেছেন – এমন একটি দৃষ্টান্তও আদি উৎসের বর্ণনার কোথাও উল্লেখিত হয়নি।”
আর, ওপরে উল্লেখিত বর্ণনায় যা অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো – এই গণ হত্যার নায়ক মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ এই কর্মটি করেছিলেন,
“জিবরাইলের আদেশে!”
যে সব ইসলাম অনুসারী পণ্ডিত ও অপণ্ডিত শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবৎ “ঐশী বাণীর অজুহাতে”মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের বনি কুরাইজা গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও মুক্ত মানুষকে চিরকালের জন্য দাস-দাসী-করণের সপক্ষে নির্লজ্জ গলাবাজি করে চলেছেন, তাঁদের ও তাঁদের পরিবারকেও যদি অন্য কোনো তথাকথিত কামেল-পীর-ফকির-গুরু-বাবাজী ও তার চেলা-চামুণ্ডারা “একই রূপ অজুহাতে একইভাবে খুন-ধর্ষণ-লুণ্ঠন ও দাস-দাসী-করণের মাধ্যমে ভাগাভাগি করে নেন”, তবেই, বোধ করি, তাঁরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারবেন!
ঐ সব পীর-ফকির-কামেল-গুরু-বাবাজীদের সাথে মুহাম্মদের পার্থক্য এই যে, তাদের তুলনায় মুহাম্মদ অনেক অনেক বেশি সফল – যার আলোচনা “কুরান কার বানী?” পর্বে (পর্ব: ১৪) করা হয়েছে।
[ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি।]
The narratives of Muhammad Ibne Ishaq (704-768 AD):
‘According to what al-Zuhri told me, at the time of the noon prayers Gabriel came to the apostle wearing an embroidered turban and riding on a mule with a saddle covered with a piece of brocade. He asked the apostle if he had abandoned fighting, and when he said that he had he said that the angels had not yet laid aside their arms and that he had just come from pursuing the enemy.
‘God commands you, Muhammad, to go to B. Qurayza. I am about to go to them to shake their stronghold.’
The prophet ordered it to be announced that none should perform the afternoon prayer until after he reached B. Qurayza. The apostle sent ‘Ali forward with his banner and the men hastened to it. ‘Ali advanced until when he came near the forts he heard insulting language used of the apostle. He returned to meet the apostle on the road and told him that it was not necessary for him to come near those rascals. The apostle said, ‘Why? I think you must have heard them speaking ill of me,’ and when ‘Ali said that that was so he added, ‘If they saw me they would not talk in hat fashion.’
When the apostle approached their forts he said, ‘You brothers of monkeys, has God disgraced you and brought His vengeance upon you?’
They replied, ‘O Abu’l- Qasim, you are not a barbarous person.’
The apostle passed by a number of his companions in al-Saurayn before he got to B. Qurayza and asked if anyone had passed them. They replied that Dihya b. Khalifa al-Kalbi had passed upon a white mule with a saddle covered with a piece of brocade. He said, ‘That was Gabriel who has been sent to B. Qurayza to shake their castles and strike terror to their hearts.’ When the apostle came to B. Qurayza he halted by one of their well near their property called The Well of Ana.
The men joined him. Some of them came after the last evening prayer not having prayed the afternoon prayer because the apostle had told them not to do so until he got to B. Qurayza.
They had been much occupied with warlike preparations and they refused to pray until they came to B. Qurayza in accordance with his instructions and they prayed the afternoon prayer there after the last evening prayer. God did not blame them for that in His book, nor did the apostle reproach them. My father Ishaq b. Yasar told me this tradition from Ma’bad b. Malik al- Ansari.
The apostle besieged them for twenty-five nights until they were sore pressed and God cast terror into their hearts.’ [1] ]2] [3]
Narratives of Imam Bukhari (810-870 AD):
Sahih Bukhari-Volume 4, Book 52, Number 68:
Narated By ‘Aisha: When Allah’s Apostle returned on the day (of the battle) of Al-Khandaq (i.e. Trench), he put down his arms and took a bath. Then Gabriel whose head was covered with dust, came to him saying, “You have put down your arms! By Allah, I have not put down my arms yet.” Allah’s Apostle said, “Where (to go now)?” Gabriel said, “This way,” pointing towards the tribe of Bani Quraiza. So Allah’s Apostle went out towards them. [4]
Sahih Bukhari-Volume 5, Book 59, Number 449:
‘Narrated Al-Bara: The Prophet said to Hassan, “Abuse them (with your poems), and Gabriel is with you (i.e, supports you).” (Through another group of sub narrators) Al-Bara bin Azib said, “On the day of Quraiza’s (besiege), Allah’s Apostle said to Hassan bin Thabit, ‘Abuse them (with your poems), and Gabriel is with you (i.e. supports you).”’ [5]
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৪৬১
[2] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮,ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৪৮৫-১৪৮৮
[3]অনুরূপ বর্ণনা: কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক: আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬, পৃষ্ঠা ৪৯৬-৫৩১
[4] সহি বুখারী: ভলুম ৪, বই নম্বর ৫২, হাদিস নম্বর ৬৮:
[5] সহি বুখারী: ভলুম ৫, বই নম্বর ৫৯, হাদিস নম্বর ৪৪৯:
Leave a Reply