তাদের টাকা চুরি আর আপনারদের অনুভূতি
লিখেছেন : মুফতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ
আমাদের রাজনীতিবিদেরা কথায় ভীষণ বিপ্লবী, আর কাজে পুরোই ভেড়ার বাচ্চা। তাঁরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না বলে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাঁরা আল্লাহ ছাড়া সবাইকেই ভয় পায়। কাল্পনিক চরিত্র বানিয়ে তাঁকে ভয় পাওয়ার নাটক করা যে কত যন্ত্রণার তা কেবল রাজনীতিবিদগণই ভালো জানে। কাল্পনিক চরিত্রকে ভয় পাওয়ার কথা বললে মূলত মানুষকেই ভয় পেতে হয়। তখন ভয় হয়ে ওঠে সর্বগ্রাসী। সবাই সবাইকে ভয় পায়। নেতাকে ভয় পায় কর্মী। কর্মীকে ভয় পায় পাবলিক। পাবলিককে ভয় পায় ঘুষখোর। ঘুষখোরকে ভয় পায় ঘুষদাতা। ঘুষদাতাকে ভয় পায় ঘুষখোর। পুলিশকে ভয় পায় জনগণ। জনগণকে ভয় পায় পুলিশ। অফিসারকে ভয় পায় কর্মচারী। কর্মচারীকে ভয় পায় আমলা। এভাবে সবাই সবাইকে ভয় পায়। ধর্ম বানিয়ে ঈশ্বর নামক কাল্পনিক চরিত্র সাজিয়ে আমাদেরকে ভয় দেখিয়েছিল প্রতারকেরা। এরপর প্রতারকেরাও ভয় পেয়েছে, ভয় দেখাতে দেখাতে ওরা ভয় পেয়ে গেছে, ভয় পাওয়ার নাটক করতে করতে কখন যেন তাঁরা সত্যিই ভয় পেয়ে গেছে। না, তাঁরা ঈশ্বরকে ভয় পায়নি, ভয় পেয়েছে মানুষকে।
তাঁরা ঈশ্বরকে ভয় পায় না বলেই মানুষের জন্য উপাসনালয় বানায়। তাদের বানানো উপাসনালয়ে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধেই মানুষ ঈশ্বরের কাছে নালিশ জানায়। তাঁরা জানে, ঈশ্বরের কাছে নালিশ করলে কিছুই যায় আসে না। তাঁরা ধর্মীয় উপাসনালয় বানায় এজন্য যাতে আপনারা আদালতে না গিয়ে ঈশ্বরের কাছে যান। তারা ধর্মীয় উপাসনালয় বানায় এজন্য যাতে আপনারা চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে হুজুরের কাছে যান। তাঁরা ধর্মীয় উপাসনালয় বানায় এজন্যে যাতে আপনারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব না হয়ে অনুভূতি নিয়ে সরব হন।
এজন্যই তাঁরা চুরি করে আর আপনারা অনুভূতি অনুভূতি করেন। তাঁরা ডাকাতি করে, খুন করে, চাঁদাবাজি করে, ধর্ষণ করে কিন্তু আপনাদের মুখে একটাই কথা : ‘অনুভূতি।’ তাঁরা আপনাদেরকে অনুভূতি দেয়, আপনারা যত অনুভূতি চান ততই তাঁরা অনুভূতি দিতে থাকে। আপনাদের একমাত্র চাহিদা হচ্ছে অনুভূতি, আর কিছু না। অনুভূতি দান করার পর তাঁরা আপনার দেশের সম্পদ কোন দেশে পাচার করল তা নিয়ে আপনার ভাবনা কিসের? আপনার তো দরকার অনুভূতির। আপনাকে তাঁরা অনুভূতি দিয়েছে।
তো আপনি অনুভূতি নিয়ে খুশি তো?
Leave a Reply