লিখেছেন : মুফতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ
বাংলাদেশের একজন স্কুলশিক্ষকের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, তিনি তাঁর ছাত্রী এবং ছাত্রদেরকে ভয় পান। যেমন তেমন ভয় না, প্রচন্ড ভয়! তার ছাত্রী এবং ছাত্ররা সবসময়ই সতর্ক থাকে, স্যারের মুখ দিয়ে ইসলামবিরোধী কথা বেরিয়ে যাবে না তো! এমনিতেই স্যারের বিজ্ঞানমনস্ক কথাবার্তা নিয়ে কয়েকজন ছাত্রী ইতিমধ্যেই আপত্তি তুলেছে, ওরা বিজ্ঞানের কথার চেয়ে কোরআনের কথা শুনতেই নাকি বেশি আগ্রহী। বিবর্তনের পক্ষে কথা বলার কায়দা নেই ঐ শিক্ষকের। তাঁর সাথে কথা বলার এক প্রসঙ্গে আমি বললাম, কিন্তু আমরা যারা মাদ্রাসায় পড়েছি আমাদের ক্ষেত্রে চিত্রটা ভিন্ন ছিল। আমরা আমাদের শিক্ষক ইসলামবিরোধী কিছু বলল কিনা সেই ভয় না পেয়ে বরং ভয় পেতাম আমাদের মুখ দিয়ে এমন কথা বের হয়ে না যায় যার দ্বারা ইসলামের বিরোধিতা হয়ে যায় এবং আমাদের হুজুর (শিক্ষক) ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আমাদের অনেক শিক্ষকই ক্লাসের মধ্যে খুবই সতর্কতার সাথে দু’চারটা প্রগতিশীল কথাবার্তা বলতেন, আমরা শিক্ষকদের সেসব কথাবার্তাকে স্বাগত জানাতাম বা পছন্দ করতাম।
বাংলাদেশের স্কুলের কুশিক্ষা এবং মাদ্রাসার কুশিক্ষার মধ্যে পার্থক্য আমি ধরতে পেরেছি। স্কুলের শিক্ষকগণ ভয়ে থাকেন, এই বুঝি কোন ছাত্রী কিংবা ছাত্র ক্লাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে ইসলাম অবমাননার দাবি তুলবে! এই বুঝি ছাত্রী এবং ছাত্ররা ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে স্কুলের পার্শ্ববর্তী মুদির দোকানদার, চায়ের দোকানদার, মসজিদের ইমাম এবং তাদের মা-বাবার কাছে “আমাদের স্যার নাস্তিকদের মতো কথা বলছে” বলে অভিযোগ করবে!
আমার মনে আছে, মালিবাগ মাদ্রাসার ক্লাসে আমাদের শিক্ষক মুফতি মাহমুদুল হাসান যেদিন বলেছিলেন “একদল পুরুষ আছে বউকে অহেতুক সন্দেহ করে, পিটিয়ে তার দ্বারা কাজ আদায় করতে চায়, এরা অত্যন্ত জঘন্য” আমরা তখন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। মাদ্রাসার পার্শ্ববর্তী মুদির দোকানদার, চায়ের দোকানদার কিংবা মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে গিয়ে কিংবা আমাদের মা-বাবার কাছে গিয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে নাস্তিকতার অভিযোগ তুলিনি।
আমাদের ক্লাসের শিক্ষক মাওলানা আব্দুল গাফফার যেদিন বলেছিলেন, “একদল পুরুষ আছে যারা বউয়ের সাথে খালি ‘খ্যাছখ্যাছ’ করে, রাস্তাঘাটে লোকদের সাথে ঝগড়া করে আর ঘরে গিয়ে বউয়ের উপরে যাবতীয় ঝাল মেটায়, এসব পুরুষকে ধরেই পেটানো উচিত” সেদিন আমরা প্রতিবাদ করিনি। বরং হুজুরের কথা আমাদের ভালোই লেগেছিল। মুফতি মাহমুদুল হাসান, মাওলানা আবদুল গাফফারের মতো আরো অনেক শিক্ষক ছিলেন যারা স্কুলের অনেক শিক্ষকের চেয়েই অনেক বেশি আধুনিক, অনেক বেশি মুক্তমনা। কিন্তু হ্যাঁ, আমার এই সম্মানিত শিক্ষকগণ কেউই ইসলাম ত্যাগ করতে পারেননি। তাদের প্রাণের ভয় আছে, পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার দায় আছে।
আমার সেই স্কুলশিক্ষক বন্ধু আমাকে জানালেন, ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা ইসলামের রক্ষা একটু বেশিই নাকি করে চলেছে। ছাত্রদের মাথায় টুপি না থাকলেও, মুখে দাড়ি না থাকলেও ছাত্রীদের প্রত্যেকের মাথায় হিজাব, গায়ে বোরকা রয়েছে। একটা ছেলে যতবার সুবহানাল্লাহ মাশাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ বলে একটা মেয়ে নাকি তারচেয়ে তিনগুণ বেশি সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ মাশাল্লাহ বলে। এটাতো একজনের অভিজ্ঞতার কথা বললাম, কিন্তু যারা বাংলাদেশে আছেন বা খোঁজখবর রাখেন তারা কি আমাকে জানাবেন, বাংলাদেশের সব স্কুলেরই কি একই চিত্র?
Leave a Reply