লিখেছেন : উম্মে হানি
আমি নিমগাছ লাগিয়ে আম ফলের আশা করেছিলাম।
আমার বড় ছেলের যখন আট বছর বয়স তখন ও কিন্ডারগার্টেনে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়তো, আর তখন আমাদের স্বামী স্ত্রী’তে রাতদিন ঝগড়া হতো, আমাকে কথায় কথায় পেটাতো। তখন আমার বাবা ভাইয়েরা এটা দেখে বলেছিলো, আমি যদি আমার ছেলেকে মাদ্রাসাতে দেই তাহলে ও আর ওর বাবার মতো অমানুষ হবে না।
আমাদের বংশের সবাই মাদ্রাসায় পড়ে আর তাদের সাথেই আমার বসবাস, তখন ওদের কথাটাকে আমার সত্যি মনে হয়।
আর আমার স্বামী শ্বশুর বাড়ির মানুষ সবাই আলিয়া শিক্ষিত বলে ওদের আমার কাছে অমানুষ মনে হতো।
একদিন আমি আমার স্বামীর থেকে অনুমতি নেওয়ার জন্য বললাম, আমি আমার ছেলেকে কওমী মাদ্রাসায় পড়াডে চাই-
এটা শুনে আমার স্বামী বললো, ছেলে কওমী মাদ্রাসায় পড়লে তার বুকের রক্ত দিয়ে আমি গোসল করব।
এই ক্বওমী আর আলিয়ার মধ্য তখনও ঘোরতর বিরোধ ছিলো, একজন আরেকজনদের দুই চোক্ষে দেখতে পারতো না। আমার স্বামী আমার বাপ ভাইকে গোমরা মৌলভী বলে ডাকতো। বাবা ওদের বাড়িতে গেলেই বলতো দেখো গোমরা হুজুর এসেছে। এটা শুনলে আমার খুব রাগ হতো কষ্ট লাগতো।
পরে আমার স্বামীর সাথে রাগ করে আমার ছেলেকে ভাইয়েদের কাছে দিয়ে দেই ওরা নিয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়।
নানাবাড়িতে আমার ছেলে দুই বছর ছিলো, আর এই দুই বছরে সে সতেরো পারা কারআান মুখস্ত করেছিলো।
আর এই দুই বছরে সে আরও দুইটা কাজ করে। একবার খেয়াল করে দেখি সে আর আমাকে মা বলে ডাকে না, তারপর থেক অনেক চেষ্টা করা হয়েছে, মারধোর হুমকি ধমকি অনেক কিছু করেছি কিন্তু সে আজ পর্যন্তও আর একবারও আমাকে মা বলে ডাক দেয় নি।
আর একবার দেখি নানিবাড়ি থেকে সে বাড়িতে এসে হাতুড়ি দিয়ে টিভি ভাংতে গেছে- আমি দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেলি আর জিজ্ঞেস করি কে তোকে এটা করতে বলেছে?
বলে আমার হুজুর।
তারপর ওকে ওখান থেকে এনে দুরের একটা মাদ্রসায় দিয়ে দেই।
আমার ছেলে এখন কোরানে হেফজ শেষ করে এ বৎসর মেশকাতে পড়ছে।
আমার যখন এ বোধ জাগ্রত হলো যে, আমি ভুল করেছি, ছেলেটার জীবন আমি নিজের হাতে নষ্ট করেছি তখন অনেকটা দেরি হয়ে গেছে- মাদ্রাসা থেকে ফিরিয়ে আনার উপায় ছিলো না।
এইযে আমি এখন আশা করি আমার ছেলে যেন প্রগতিশীল হয়, যেন ধর্মের গোড়ামি বুঝতে পারে, কিন্তু এইটা কি কখনও সম্ভব!
যাকে সেই ছোট্টবেলা থেকে শুধু ধর্মের জ্ঞানই দেওয়া হচ্ছে, পৃথিবীতে সব বাদে একমাত্র ধর্মই সত্য, সেই ছেলের কি কখনও প্রগতি মুক্তচিন্তা নিয়ে বের হয়ে আসা সম্ভব! কখনই না।
আমার ছেলে একসময় আমাকে মা ডাকা ছেড়ে দিয়েছিলো, এখন আমার হাতে খাওয়া আমার সাথে কথা বলা সবই ছেড়ে দিয়েছে।
হয়তো আমার জন্য সামনে আরও কঠিন কোনও দিন অপেক্ষা করছে।
Leave a Reply