‘মুসলমান বাঙালি’ নামক কাঁঠালের আমসত্ত্ব
লিখেছেন : বিধুভূষণ দাস বিধান
এদেশের ইন্টেলেকচুয়ালগন একই সাথে ধর্ম এবং জিরাফে থাকতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। দীর্ঘদিন আত্মপরিচয়হীনতায় ভোগে তারা রাজ্জাক-ছফা-সলিমুল্লাহদের কল্যাণে “মুসলমান বাঙালি” নামক কাঁঠালের আমসত্ত্ব জাতীয় একটা নিজেদের পরিচয় দাঁড় করানোর ব্যর্থ চেষ্টা আজও অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু তবুও পরিচয়হীনতার সংকট গোপন রাখতে পারেনা। তাই কোন মুসলমান বাঙালি কথা সাহিত্যিক যদি সংস্কৃতির প্রধান উপাদান ধর্মকে ইগনোর করতে চায় তাহলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়তো তাকেই নিতে হবে, নাকি?
বাঙালি সংস্কৃতির স্বীকৃতি প্রাপ্ত প্রায় সকল সংস্কৃতি মুসলমানদের বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক এবং তা শিরকের দিকে নিয়ে যায়। কারন নৃতাত্ত্বিকভাবে এগুলো হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কযুক্ত। এগুলো মুসলমানদের পক্ষে কখনোই পালন করা সম্ভব না, এখন যে সব মুসলমান বাঙালি এগুলো পালন করতে চায় সেগুলো তাদের নিজস্ব সুবিধার ব্যাপার। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশের সকল মুসলিমকে তা পালনে উৎসাহী করতে চাইলে অবশ্যই সেখানে গ্যাঞ্জাম একটা দেখা দিবেই। যেমন ধরুন ভাইফোঁটা ব্যাপারটি, তা আজ অনেক সুশীল মুসলমান বাঙালিকে সচরাচর করতে দেখা যায়, কিন্তু ভাইফোঁটা কখনো মুসলমান বাঙালির সংস্কৃতি হতে পারে না, কারণ তা হিন্দুদের ধর্মীয় রীতিনীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত, আর তার পৌরাণিক কাহিনীও কারো অজানা নয়।
কেউ কেউ মনে করে থাকেন, সংস্কৃতির সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। মানুষের সৌন্দর্যপিপাসু মন যেখানে ছন্দ খুঁজে পায়, মানুষ যেখানে মনের খোরাক পায়, ধর্ম সেখানে বাধ সাধবে কেন? এ প্রশ্নের জবাব অত্যন্ত সহজ। হরি কীর্তনে যতই ছন্দের আনন্দ থাকুক না কেন, কোন মুসলমান হরি সংকীর্তনের ভক্তজন হতে পারে না। ইনফ্যাক্ট সংগীতামোদীও হতে পারেনা। ইসলামে তা অমার্জনীয় পাপ। তেমনি ভাইফোঁটা ব্যাপারটাতে ভাইয়ের প্রতি বোনের ভালোবাসার সমীকরণে যতই সৌন্দর্য পরিলক্ষিত হোক না কেন! মুসলমান বাঙালি পরিচয়ে গর্বিত কোন কথা সাহিত্যিক তার স্বাদ গ্রহণ করতে পারে না। যদি করতে হয়, হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি হিসেবে মেনে নিয়েই করা উচিৎ। তাতে তার মুসলমান বাঙালি পরিচয়টা যতই প্রশ্নের সম্মুখীন হোক না কেন?
Leave a Reply