হিন্দু ধর্ম – ব্রাহ্মণ্য সমাজ
(ফেসবুক থেকে পাওয়া, লেখকের নাম অজানা)
এক ভারতীয় ব্রাহ্মণের গোপন সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন এক রাশিয়ান সাংবাদিক —-
সাংবাদিক : পৃথিবীতে মানুষ যখনই শোষিত হয়েছে, তখনই শোষিত মানুষেরা কোনো না কোনো সময় বিপ্লব করেছে। ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৯০% মানুষ শূদ্র। এই শূদ্ররা হাজার হাজার বছর ধরে শোষিত হচ্ছেন,কিন্তু তাঁরা কখনো বিদ্রোহ করেন নি?
ব্রাহ্মণ : না। কখনো না। বিদ্রোহ করবে কী? বিদ্রোহ করার চিন্তাই করেনি কোনোদিন।
সাংবাদিক : কেন ?
ব্রাহ্মণ : এমন এক সিস্টেমে এদেরকে রাখা হয়েছে, তা এক মজার বিষয়। যেমন ধরুন- সন্তান এরা জন্ম দিতে পারে, কিন্তু তার নাম কী রাখা হবে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। নাম রাখতে হলে ব্রাহ্মণকে ডাকতে হবে। সন্তান জন্ম দিলে অসুদ্ধ হয়, সুদ্ধ হতে হলে ব্রাহ্মণকে ডাকতে হবে।
সাংবাদিক : অদ্ভুত ব্যাপার!
ব্রাহ্মণ : শুধু তাই না, বাড়ী নিজেরা পরিশ্রম করে বানাতে পারে, কিন্তু নতুন বাড়ীতে নিজেরা প্রবেশ করতে পারে না। ব্রাহ্মণকে ডেকে আনে। সে প্রবেশ করায়।
সাংবাদিক : সত্যি, ভাবা যায় না, এভাবে কোনো সিস্টেম চলতে পারে।
ব্রাহ্মণ : এরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কিন্তু বিয়ে করতে পারে না। এমনকি বিয়ের তারিখও ঠিক করতে পারে না। ব্রাহ্মণকে ডেকে আনে। সে তারিখ ঠিক করে দিয়ে যায়। তার পর সেই বিয়ের দিনে বিয়ে দিয়ে যায়।
সাংবাদিক : আর কী কারন?
ব্রাহ্মণ : পারিবারিক শুভ কাজ করতে পারে, দোকান খুলতে পারে বা ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে পারে, কিন্তু শুভ মুহুর্ত এরা ঠিক করতে পারে না। ব্রাহ্মণকে ডেকে আনে। ব্রাহ্মণ শুভ মুহুর্ত ঠিক করে দিয়ে যায়। পরিবারে কেউ মারা গেলে অসুদ্ধ হয়ে যায়, সুদ্ধ করতে হলে ব্রাহ্মণকে ডেকে আনতে হয়। আর প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণ তার পাওনা গন্ডা বুঝে নেয়।
সাংবাদিক : আচ্ছা আপনি বললেন ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে পারে। বৃহৎ ব্যবসা করতে পারে না কেনো?
ব্রাহ্মণ : এরা জানে এদের সম্পদের আধিকার নেই। অবশ্য এটা আমাদেরই শেখানো। তাই পুঁজি জমানোর কথা এরা ভাবে না। তাই বৃহৎ ব্যবসার কথা ভাবে না।
সাংবাদিক : তার মানে শুধু সামাজিক শোষন নয়, সমানে আর্থিক শোষনও চলছে ।
ব্রাহ্মণ : সামাজিক শোষন করা সম্ভব হলেই তো আর্থিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সমস্ত ধরনের শোষন করা সম্ভব।
সাংবাদিক : এ তো পা থেকে মাথা পর্যন্ত শৃঙ্খলিত। এই শৃঙ্খল ভেঙে বেরোনো তো দেখছি অসম্ভব।
ব্রাহ্মণ : যারা নিজেদের জীবনের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, ভুল আর ঠিক এর তফাৎ করে উঠতে পারে না, শত্রু কে পরম মিত্র বলে জ্ঞান করে তাদের স্বাধীনতা? অবান্তর কথা।
সাংবাদিক : ভারতের সংবিধানে তো সামাজিক ন্যায়, সাম্য, স্বাধীনতার কথা বলা আছে।
ব্রাহ্মণ : যারা নিজের বাবা মায়ের থেকে ব্রাহ্মণের কথায় বেশী বিশ্বাস করে, নিজের বাড়ীর বিধবা বা আত্মীয়াকে অশুভ মানে, পাথরের মূর্তিকে বাবা-মা বলে ডাকে, শিক্ষা, বিজ্ঞান মনস্কতা, যুক্তিবাদ থেকে অনেক দূরে থাকে, তাদের স্বাধীনতা? কখনোই সম্ভব নয়।
সাংবাদিক : ব্রাহ্মণদের তৈরী এই ব্যবস্থা, তার মানে, খুবই পাকাপাকি ব্যবস্থা?
ব্রাহ্মণ : এই ব্যবস্থা খুবই শক্ত ও পোক্ত, ভাঙা অতো সহজ নয়। শুধু সামাজিক নয় আর্থিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সব জগৎ-ই ব্রাহ্মণ্যবাদের দখলে। যেমন ধরুন, যাত্রা, সিনেমা, নাটক,সিরিয়াল, এতে সুধু ব্রাহ্মণদেরই গল্প। নায়ক নায়ীকারাও বেশিরভাগই ব্রাহ্মণ নইলে ব্রাহ্মণ্যবাদী।
সাংবাদিক : অর্থাৎ গোয়েবলসীয় প্রচার ব্যবস্থা।
ব্রাহ্মণ : এছাড়াও আছে, ধর্মগুরু, বিভিন্ন ধরনের বাবা, নামসংকীর্তন, মাইক, ধর্মীয় বই-পুস্তক, সন্যাসী, সাধু, পূজো, প্যান্ডেল আরও কত কী। সমস্ত প্রচার ব্যবস্থা ব্রাহ্মণদের দখলে।
সাংবাদিক : আর?
ব্রাহ্মণ : রাজনৈতিকভাবে সরকারপক্ষ, বিরোধীপক্ষ সবই ব্রাহ্মণদের দখলে, নইলে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের দখলে।
সাংবাদিক : এরা যদি কখনও সঙ্ঘবদ্ধ হয় তাহলে কি এই শৃংখল ভাঙতে পারবে না?
ব্রাহ্মণ : সেখানেও অসুবিধা।
সাংবাদিক : কী রকম?
ব্রাহ্মণ : দেখুন এই ৯০% শূদ্রকে বিভিন্ন জাতের ঘরে ধুকিয়ে দিয়েছি। যেমন ধরুন- এস.সি., এস. টি., (যাদের আমরা আগে ঘেন্নায় ছুতাম না। এখন একটু ছাড় দিয়েছি। ওদের যে ভোটের অধিকার হয়েছ! ছুঁই- কিন্ত ঘৃণাটা ঠিক রেখেছি।), ও.বি.সি.। আর ধর্মের ভিত্তিতে আগেই কিছু তো অংশকে বার করে দিয়েছি। কিছু ও.বি.সি. কে সার্টিফকেট দিয়েছি। কিছু ও.বি.সি. কে সার্টিফকেট দিই নি। এদের বলে দিয়েছি “ তোরা জেনারেল। এইসব ছোটোলোকদের উপরে তোরা’’। তাতেই এদের কত আনন্দ!
সাংবাদিক : কিন্তু এর এক একটা অংশ তো আপনাদের চেয়ে সংখ্যায় বেশী।
ব্রাহ্মণ : এখানেও আমাদের দক্ষ কারীগররা সুন্দর কাজ করে রেখেছে । যেমন- এই ঘর গুলির মধ্যে আবার বহু কুটুরী করে দিয়েছি। সব সুদ্ধ প্রায় ৭৬৫০টি। কেউ কাউকে যাতে দেখতে না পারে তার জন্যও কঠোর নিষেধ জারী করা আছে। এই কুটুরীগুলিকে আমরা আবার একই লেভেলে রাখিনি।
ব্রাহ্মণ : কেমন শক্ত হয়েছে আমাদের তৈরী করা খাঁচা ও শেকল বলুন তো একবার!
সাংবাদিক : এবার বুঝলাম, কেন এরা হাজার হাজার বছর ধরে গোলাম, গোলামী থেকে মুক্তি নিতে চায়না। আমার চোখ খুলে গেলো।
ব্রাহ্মণ : আপনি অভারতীয় । তাই। কিন্তু এদের তো চোখই নেই, খুলবে কী?
Leave a Reply