মাইকেল মধুসূদন দত্ত ইংরেজি সাহিত্যের বড় কবি হতে চেয়েছিলেন। বিদেশে গিয়ে ইংরেজিতেই কাব্যচর্চা করতেন। কিন্তু নাম করতে পারছিলেন না। শোনা যায়, তিনি নাকি ‘পৃথিবী’ বানানটাও ভুলে গিয়েছিলেন। সেই তিনি পরে বাংলায় কাব্যচর্চা শুরু করে হয়ে গেলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি–মহাকবি!
ফেসবুকেও প্রায় সবার শুরুটা হয়েছিল বাংলিশ দিয়ে। বেশিরভাগেই সেই পথ থেকে সরে এসেছেন। যদিও কোলকাতার অনেককে এখনো বাংলিশেই লেখালেখি করতে দেয়া যায়। তো বাংলায় লেখালেখি করতে করতে অনেকেই বইটই বের করে বড় বড় লেখক বনে গেছেন। অনেকে বই বের না করলেও ফেসবুকেই ভালো লেখেন, অনেকেই তাদের লেখা পড়েন। এর পেছনে অবশ্য মুরাদটাকলা গ্রুপের অনেক অবদান আছে।
তারপর বাংলায় লিখতে গিয়ে যেটা হলো–প্রচুর বানান ভুল–এটা নিয়াও অনেকে কাজ করছেন। অনেক পেজ-গ্রুপে শুদ্ধ বানান চর্চা বিষয়ক লেখালেখি হয়। এভাবে একটা জেনারেশন কিছুটা হলেও উৎরে গেছে।
এখন যেটা বেশি চোখে লাগছে–অশুদ্ধ বাক্য গঠন আর ভাঙা শব্দ। বাংলিশ পড়তে গেলে যেমন চোখের পীড়া হতো, ইদানিং এইসব বাক্য সেরকম পীড়া দেয়। অনেকের কথা শুনলেও মনে হয় এ জীবনেও স্কুলে যায়নি। এটা যে শুধু নতুনরাই করেন, তা নয়, পুরানরাও হয়তো নতুনদের দেখে ওভাবে লেখায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন–বা কোনো টেকনিক্যাল কারণেও হতে পারে। যেমন ধরেন–আমি লিখতে চাই “আমরাও”, তো ফোনে “আম” পর্যন্ত টাইপ করলেই হয়তো “আমরা” এবং আরো অনেক শব্দ সাজেশন হিসাবে চলে আসে। সেটায় ক্লিক করলেই “আমরা” চলে এসে অটোমেটিক স্পেস পড়ে যায়, তারপর যখন “ও” লিখি, তখন “আমরাও”-এর বদলে হয়ে যায় “আমরা ও”–পরে অর্থটাই পালটে যায়। একটু খেয়াল করলেই এই সমস্যাগুলো এড়িয়ে চলা যায়।
আপনারা লেখেন ভালোই, কিন্তু যখনই এরকম কিছু হয়, নিশ্চিত করে বলতে পারি–আমার মতো পুরানো পাঠকদের পড়তে সমস্যা হয়। থমকে যেতে হয়। একাধিকবার পড়ে তারপর অর্থ বুঝতে হয়। তাই আমাদের মতো পাঠকদের কথা বিবেচনা করে যদি দয়া করে এদিকটায় একটু খেয়াল রাখেন, বড় উপকৃত হই।
সবশেষে, যদি ধৃষ্টতা না মনে করেন, তাহলে একটা কথা বলি–আপনারা যারা শিক্ষিত আছেন, যারা নিয়মিত লেখালেখি করেন–মাঝে মধ্যে যদি বাংলা ব্যাকরণে একটু চোখ বুলান–ভালো হবে…
সবার জন্য শুভকামনা রইল… আপনাদের লেখালেখি আরো সুন্দর ও সার্থক হউক।
Leave a Reply