একই মায়ের দুটি সন্তান, হিন্দু আর মুসলমান।
একই কুলে জন্ম মোদের, একই বুকের দুগ্ধপান।
মরুতে এলেন মোহাম্মদ, মথুরাতে এলেন শ্যাম।
ইমান খেলা খেলে রাসুল, লীলা খেলে ঘনশ্যাম।।
মুসলমানের কোরআন কিতাব, হিন্দুদের হয় বেদ-পুরাণ।
মুসলিম ডাকে আল্লাহ বলে, হিন্দু ডাকে ভগবান।।
দেখে আয় ভাই হিন্দু-মুসলিম, মদিনা আর মথুরায়।
দুই রাখালে যুক্তি করে গরু আর বকরি চরায়।।
মা খাদিজা পাগল হলেন, নবির প্রেমে মদিনায়।
বাঁশির সুরে পাগল হয়ে, রাধা ছুটে যমুনায়।।
মুসলমানের মক্কা-মদিনা, হিন্দুদের হয় গয়া-ধ্যাম।
ইমান খেলা খেলে রাসুল, লীলা খেলে ঘনশ্যাম।।
বাসুদেব বাউলের গান শুনছিলাম।
বাউলদের সহজ-সরল চিন্তাধারায় বিভেদ জিনিসটা আসে না। তাদের চিন্তাধারাটা সমস্ত মতের মিলনমেলা… কোনো মতবাদ বা মানুষকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করা যায় না। মানুষ মরে গেলেও তার মতবাদ কোনো না কোনো ভাবে কমবেশি থেকেই যায়। তাই বাউলরা কোনো কিছুকে একেবারে বর্জন না করে কীভাবে মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ কমিয়ে আনা যায়, সেই চেষ্টা করেন।
এই বিশাল ভারতবর্ষে প্রায় সমস্ত ধর্মের মানুষ জায়গা পায়। আরো সহজ করে বললে–বর্তমানে যে হিন্দুধর্মের কথা বলা হয়, তাতে প্রায় সমস্ত মতবাদ গৃহীত হয়েছে। এমনকি নাস্তিকতাও। অনেক হিন্দু ধর্মীয় গুরু যিশুকে অবতারের মর্যাদা দেন, মোহাম্মদ আর কৃষ্ণতেও পৃথক করেন না। বলেন–পথ ভিন্ন, কিন্তু লক্ষ্য এক।
এখানের বাউলরা যে জন্মসূত্রে শুধু হিন্দু, তা নয়। বাউলরা মুসলমান পরিবার থেকেও আসে। অ্যান্টনি ফিরিঙ্গিকেই কি ভারতবর্ষ কিংবা হিন্দুরা বর্জন করতে পারছে! কোনো হিন্দু কি ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি ভাঙচুর করতে যাবে? কোনো হিন্দু কি বাউল আখড়া ভাঙতে যাবে?
হিন্দুদের মধ্যে সমস্যা আছে–ধর্মান্ধতা কুসংস্কার জাতপাত ভেদাভেদ ছোঁয়াছুঁয়ি ঘৃণা–এদের ব্যক্তিগত-পারিবারিক বা ধর্মীয় হিসাব-নিকাশ রীতিনীতিতে না মিললে অন্যদের এড়িয়ে যাবে–সেইটা ভিন্ন ব্যাপার, কিন্তু কোনো কিছু করতে জোরাজুরি করবে না, ভায়োলেন্ট হবে না সহজে। (যদিও মাঝে মাঝে ছোঁয়াছুঁয়ির অভিযোগে পিটিয়ে মারার কাহিনী ভারতের কোথাও কোথাও শোনা যায়।) ওদিকে জোরাজুরি না করার কথা বলে মুসলমানরা–ইসলামে নাকি কোনো জোরজবরদস্তি নাই, যার যার ধর্ম তার তার… তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার… গালভরা বুলি–কিন্তু বাস্তবে তার প্রমাণ মেলে না।
নাস্তিক-কোতল, মন্দির ভাঙা, মূর্তি ভাঙা, বাড়িঘর ভাঙচুর, বাউলদের চুল-দাড়ি কেটে দেয়া, আশ্রম ভাঙচুর–প্রচুর কাহিনী আছে। আবার প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও কিছু না কিছু ঘটাইতেছে। এই তো আবার দুইদিন আগে নড়াইলে হারেজ বাউলের আশ্রম ভাঙচুর করল। ছবিটা দেখেন–ওই ‘বেদীতে’ কী ছিল জানি না, কিন্তু দেয়ালে আল্লাহর স্মরণে ‘৭৮৬’ লেখা… এই সহজ সরল ব্যাপারগুলা দেখার চোখ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরে মানুষের কেন বন্ধ হয়ে যায়–বুঝি না!
pic credit : banglanews24 dot com
Leave a Reply