ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত, গাজী শামছুর রহমান সম্পাদিত–বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন–অর্থাত শরিয়া আইনের এই বাংলা ভার্সনের প্রথম খণ্ডের তৃতীয় অধ্যায়টির নাম “মানব জীবনের বিরুদ্ধে অপরাধ”–এর ৫৩ নং ধারাটি হলো “বিভিন্ন পন্থায় হত্যা”–অর্থাত কীভাবে হত্যা করলে শরিয়া আইনে কী শাস্তি–সেটা বলা হয়েছে।
//শ্বাসরুদ্ধ করিয়া, আগুনে ফেলিয়া, পানিতে নিক্ষেপ করিয়া, উচ্চ স্থান হইতে ফেলিয়া দিয়া, বিষাক্ত পদার্থ পান করাইয়া, মাটিতে পুঁতিয়া অথবা অভুক্ত রাখিয়া কাহাকেও হত্যা করিলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হইবে।//
উক্ত গ্রন্থের ২৫০ নং পৃষ্ঠায় ৫৩ নং ধারাটির বিশ্লেষণ আছে। পুরো পৃষ্ঠাটি এই পোস্টে সংযোজন করা হলো। বিশ্লেষণটিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার করার পূর্বে একটু ভিন্ন প্রসঙ্গ–
নবী মোহাম্মদ (সাঃ)-এর মহানুভবতার দিকটা তুলে ধরতে এই ঘটনাটির কথা বেশ গর্ব করে বলা হয়ে থাকে যে–খায়বার অভিযানকালে এক ইহুদী নারী খাসির মাংসে বিষ মিশিয়ে নবিজিকে খাইয়েছিল… নবিজি সেটা জানার পরেও ওই ইহুদী নারীকে ক্ষমা করে দিয়ে এক মহৎ দৃষ্টান্তের সৃষ্টি করেছিলেন। [এখানে অপ্রাসঙ্গিক ভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, নবিজি ওই খাসির মাংস খেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন, এবং দীর্ঘদিন রোগ-শোকে ভোগার পরে ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন)]
যা হোক, এবার ৫৩ নং ধারাটির বিশ্লেষণে ফিরে যাই। বিষ খাইয়ে হত্যা করার ব্যাপারে উদাহরণসহ বলা হয়েছে–
//বিষাক্ত পদার্থ পান করাইয়া হত্যা করিলেও হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হইবে। খায়বার অভিযানকালে এক ইহুদী নারী রাসুলুল্লাহ (সা)-কে বিষমিশ্রিত বকরী আহার করিতে দেয়। বিষক্রিয়া হইতে রাসূলুল্লাহ (সা) রক্ষা পাইলেও তাঁহার সাহাবী বিশর ইবনুল বারাআ (রা) নিহত হন। হত্যার অপরাধে উক্ত নারীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।//
এখানে একটা টিকা আছে–নং ৪২। ফুটনোটে গেলে পাই–“আলমগিরী, ৬খ, পৃ.৬”।
[আমার সংগ্রহে এই মুহূর্তে “আলমগিরী” নাই। তাই এর ষষ্ঠ খণ্ডের ৬নং পৃষ্ঠায় ঠিক কী আছে, সেটা দেখতে পারছি না। তবে শরিয়া আইন নিয়ে নতুন করে কিছু বলা নাই–আপনারা জানেন–ইসলামিক স্কলাররা ইসলামের যাবতীয় রেফারেন্স ঘেঁটে শরিয়া আইনের ধারাগুলি তৈরি করে রেখেছেন, যাতে যখন কোনো দেশে আল্লাহর আইন কায়েম হবে, অর্থাৎ কোনো দেশ শরিয়া আইনে চলবে, তখন যেন নতুন করে আবার কোরআন-হাদিস না ঘাঁটতে হয়।]
দুইটি পরস্পরবিরোধী কথা একসাথে সত্য হতে পারে না, হয় নবিজি ওই ইহুদি নারীকে ক্ষমা করেছিলেন, নয়তো ক্ষমা করেন নি। এখানে ক্ষমা করেন নি–সেটার পক্ষে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ক্ষমা করেছিলেন–এই কথার স্বপক্ষে কি কোনো তথ্য আছে? থাকলে আসলে কোনটা সত্য? আর যদি স্বপক্ষে তথ্য থাকে, তাহলে এরকম ভুলভ্রান্তির শরিয়া আইন দিয়ে আমরা কী করিব!
Leave a Reply