লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পইরা সুন্দ্রীরা দেখি সব ধনক্ষেতের দিকে দৌড়াইতেছে। এদিকে আমি যে পাটক্ষেতে বইসা আছি–সেদিকে কারো ইট্টুও খেয়াল নাই। আরেকবার প্রমাণিত হইল–ধন-সম্পদ-অর্থ-বিত্ত-প্রভাব-প্রতিপত্তি-ক্ষমতার দিকেই সবার ঝোঁক বেশি।
যাউগ্গা দুক্কের কতা–হৃদয় খুঁইড়া আর বেদনা না জাগাই। তার চাইতে বদনা নিয়া পাটক্ষেতেই বইসা পুরানা লাল নীল বেগুনী রঙের দিনগুলার কথা কী মনে পড়তেছে, একটু কই–তখন একবেলা পাটক্ষেতে নিড়ানির ‘কিষাণ’ দিলে ২০ টাকা পাওয়া যাইত। বোরো ধানের মন তখন আছিল ২০৫-২১০ টাকার মতো–মোটা চাউল ৮ টাকার সের, আর চিকনডা আছিল মনে হয় ১২ টাকার মতো। লাল আটাও ওরকম ৮ টাকার মতোই আছিল। ১৫ মাইল দূরে সিনেমার টিকিট আছিল ৫ টাকা ২৫ পয়সা। আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধইরা কয়েকমাইল হাঁটা, তারপর বড় রাস্তায় গিয়ে বাস ধইরা শহরে যাওয়া…
তার আগে ফাঁকা পকেট ভরতে হবে। সহজ উফায়–গোলা থিকা মন খানেক ধান সরাইয়া ফেলা। তাইলে আর মাসখানেক পকেট নিয়া নো চিন্তা। ধান সরাইতে গিয়া ধরা খাইলে, বা সুযোগ-সুবিধা না মিললে বিফল মনোরথে ভোর বেলা উইঠা দল বাইন্ধা পাটক্ষেত নিড়ানির কিষাণ দিতে বেড়িয়ে পড়া। কয়েকদিন পর হাটবারে কিষাণের দাম–প্রতিদিন ২০ টাকা কইরা–বেশ ভালোই পকেট গরম হইয়া যাইত। তারপর জুম্মাবারে সক্কাল সক্কাল আমার মতোই সাথীহারা সঙ্গীটঙ্গী জোগাড় কইরা বেড়িয়ে পড়া।
হল ভাঙতেই সোজা ভাতের হোটেলে দৌড়। মুরগি-ভাত-ডাইল–ইস্পেশাল ভাবে কাঁচা মরিচ আর পিঁয়াইজ চাইয়া নিয়া পেট কইরা ভর্তি খাওয়া… এদিক-ওদিক ইট্টু ঘোরাঘুরি… তারপর বেলা পড়তেই বাসস্ট্যাণ্ডের দিকে…
ফেরার সময় আবার সেই মেঠো পথ,–আহা, কী দেখলাম সিনেমায়, কী শুনলাম গান–তুমি ছিলে না যখন চোখে ছিলো না স্বপন, কিংবা, চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা–চিল্লাইতে চিল্লাইতে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাইত। আর যদি একটু চান্দের আলো থাকে–পুকুর পাড় দিয়া ফেরার সময় সাপের লেজে পা পড়ার একটু কম হইতো আরকি… এখন পথ পরিবর্তন হইয়া গেছে… সাপটাপ তেমন একটা নেই, তবুও পুকুরের ওই দিকটায় যেতে ভয় লাগবে… তার চেয়েও বেশি ভয়–এ যুগের সুন্দ্রীদের… মৃত্যুর ফেরেস্তাদের সাথে দেখি তাদের ওঠাবসা…
Leave a Reply