লিখেছেনঃ আরিফ জেবটিক
হালের সেনসেশন হইল ‘ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট’। আমিও ব্লগার, আপনিও ব্লগার, ইমামকে হুমকি দিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ফারাবিও ব্লগার- সব মিলেমিশে একাকার, কার বাপের কী?
পিয়াল ভাই গত কিছুদিন আগে এক ব্লগার সভায় বিরক্ত হয়ে বলেছিল, ’আমি ৫টা বই ঘেটে, ৫ জনের কাছ থেকে তথ্য জোগাড় করে ৫ লাইনের একটা ইতিহাস লিখি আরেকজন ৫ মিনিটে লেখা কপিপেস্ট করে-দুজনরেই ব্লগার বলা হয়।’ কিন্তু এখন বোধহয় সময় এসেছে মুসলিম ব্লগার, হিন্দু ব্লগার, নাস্তিক ব্লগার ট্যাগ লাগানোর। ছাগু ব্লগার বনাম বাংলাদেশী ব্লগার অবশ্য অনেকদিন ধরেই চলছিল, কিন্তু ট্যাগ হিসেবে এখনও জাহির হয়নি, হওয়া এখন সময়ের দাবি।
রাজীবের মৃত্যুর পরেই লিখব লিখব বলে ভাবছিলাম, আজকে সামিউল নামের একজন আহত হওয়ার পরে ভাবলাম লিখেই ফেলি। বাংলা অনলাইনে কিছু মানুষ আছে যারা নিজেদেরকে নাস্তিক দাবি করে। নাস্তিকের সোজা বাংলা আমি যা বুঝি, সেটি হচ্ছে তারা স্বীকার করে না যে সৃষ্টিকর্তা আছেন। এতে করে সৃষ্টিকর্তার কিছু যায় আসে না নিশ্চয়ই। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই আল্লাহকে স্বীকার করে না, তারা গড, ভগবানকে মানে। কেউ দেবতা পূঁজা করে, কেউ মনে করে যীশুর পরে আর কোনো নবী নেই। এতে করে আল্লাহর দুনিয়াতে কিছু যায় আসে না। আবার তারাও নিশ্চয়ই মনে করে যে আমরা যখন তাদের দেবদেবী স্বীকার করি না, তাতে তাদেরও কিছু যায় আসে না। এর মধ্যে নাস্তিকরা কাউকেই স্বীকার করে না, এতে এই বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদেরও কিছু আসা যাওয়ার নেই।
কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের দেশের নব্য অনলাইন নাস্তিকদের অধিকাংশই আসলে নাস্তিক না, তাদের অধিকাংশই আসলে ধর্মবিদ্বেষী। ধর্মান্ধ মানুষ যেমন তার সুবিধা মতো ধর্মের আক্রমনাত্মক বানীগুলো খুঁজে বের করে মানুষের উপর হামলে পড়ে, একই ভাবে এই ধর্মবিদ্বেষীরাও ধর্মের পছন্দমতো আক্রমন সুবিধাজনক জায়গাগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো নিয়ে হামলে পড়ে। প্রথম দল আক্রমন করে মানুষের শরীরে, পরের দল আক্রমন করে মানুষের মনে।
আমার কথা হলো আপনি ধর্ম বিশ্বাস করেন না, এটা আপনার ব্যাপার, কিন্তু যে বিশ্বাস করে তাকে আক্রমন করবেন কেন, তাকে কেন বিদ্রুপ করবেন? আমার স্বল্প পাঠের অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে আমাদের তথাকথিত নাস্তিক নামধারী কিন্তু আদতে ধর্মবিদ্বেষী মৌলবাদীরা মনোবিকারে ভুগছেন। এটেশন সিক করাটাই তাদের মূল কাজ। নিজেদের প্রতি এটেনশন সিক করা ছাড়া তারা ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করে কারো দুইইঞ্চি উপকার করতে পেরেছেন বলে দেখলাম না।
এই উপমহাদেশে ধর্মের বড় সংস্কারক ছিলেন রাজা রামমোহন আর বিদ্যাসাগর। তারা হিন্দু ধর্মের মধ্যে বিধবা বিয়ে চালু করেছিলেন। ব্রিটিশ কিছু শাসক এদেশ থেকে সতীদাহ প্রথা তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু এসবই করতে হয়েছে ধর্মের আদল ঠিক রেখে। সুস্পষ্ট সংস্কার ছাড়া খামোখাই ধর্ম নিয়ে টিটকারী করলে তারা কিছু অর্জন করতে পারতেন বলে আমার মনে হয় না। আরজ আলী মাতুব্বর ধর্মের অনেক আচার ও বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তিনি নিঃসন্দেহে নাস্তিক ছিলেন, কিন্তু ধর্ম নিয়ে টিটকিরি করতে দেখিনি তাকে।
কিন্তু আমাদের নাস্তিক পরিচয়দানকারী আদতে ধর্মবিদ্বেষী মানুষরা অন্য মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে টিটকারী করা, আক্রমন করে কুৎসিত ও নোংরা কথা বলাকে ফ্যাশন জ্ঞান করেন। এর কূফল হিসেবে আবার অন্য আরেকদল মৌলবাদী এদেরকে কতল করাকে ধর্ম মনে করেন! আক্রান্ত হওয়ার পরে ধর্মবিদ্বেষী মৌলবাদীরা মনে করেন যে তাদের বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হয়েছে, তারা তখন সেই শোরগোল তুলেন। কিন্তু বাকস্বাধীনতা মানে অন্যের বিশ্বাসকে নিয়ে বিদ্রুপ করাকে কেমনে বুঝায়, আমি সেটা ধরতে পারিনি।
আমাদের দেশের একদল ধর্মান্ধ অন্য মানুষের মন্দিরে লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমন করেছেন। এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। আমার অন্য একদল ধর্মবিদ্বেষী অন্ধ লোক সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের মনে কীবোর্ড নিয়ে আক্রমন করছেন। এই দুই আক্রমনের মাঝে তফাৎটা আসলে কতটুকু?
প্রথম দল আর দ্বিতীয় দল-এই দুইদল ধর্মান্ধরা এই একবিংশ শতাব্দীতে আমাকে যারপরনাই বিরক্ত করছে, এই বিরক্তি প্রকাশ করার জন্যই এই লেখা, অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।
[Arif Jebtik (Notes) on Thursday, March 7, 2013 at 4:28pm]
Leave a Reply