বিজ্ঞানের কথা না হইলেও জ্ঞানের কথায় ‘দল, মত, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে’ বইলা একটা ব্যাপার আছে। একেবারে নির্বোধ না হইলে এই ব্যাপারটা বুঝতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয় যে, মানুষ হইতে হইলে এইসব আজাইরা ব্যাপারগুলার ঊর্ধ্বে উঠা আবশ্যক।
এছাড়া আমাদের অঞ্চলে দেশের সীমানায় যেভাবে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়, সীমান্তে চোরাচালানি আর যেভাবে পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারা হয়–এর সাথে ইউরোপীয় দেশগুলার সীমানার সাথে তুলনা করি, তখনও মানুষ হিসাবে লজ্জা পাইতে হয়। তখন দল, মত, জাতি, ধর্ম, বর্ণ-এর সাথে দেশ-দেশপ্রেম জিনিসগুলাও যোগ হয়।
সম্প্রতি নিউ জিল্যান্ডের মসজিদে যে গুলি হইলো–এর পেছনে কারণ হিসাবে কেউ ধর্মগত বিদ্বেষ, কেউ জাতিগত বিদ্বেষ, কেউ জাতীয়তাবাদকে দায়ী করছেন। আর দল, মত, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দেশ–এগুলা মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে। ভেদাভেদ, বৈষম্য, বিদ্বেষ–এক সূতায় গাঁথা। বৈষম্য আছো আছে–নারী-পুরুষের বৈষম্য, ধনী-গরীবের বৈষম্য…
দল, মত, জাতি, বর্ণ কে বৈষম্য হিসাবে দেখলেও বেশিরভাগেই নাস্তিক ট্যাগ খাওয়ার ভয়ে ধর্ম জিনিসটাকে এড়িয়ে যায়। অনেকে ধর্ম যোগ করলেও ‘দেশপ্রেমিক না’ ট্যাগ খাওয়ার ভয়ে দেশ-সীমানা–এসব এড়িয়ে যায়। অনেকে দেশ যোগ করলেও নারীবাদী ট্যাগ খাওয়ার ভয়ে নারী-পুরুষের বৈষম্য এড়িয়ে যায়। অনেকে নারী-পুরুষের বৈষম্য মেনে নিলেও কমিউনিস্ট ট্যাগ খাওয়ার ভয়ে ধনী-গরীবের বৈষম্য এড়িয়ে যায়। জানি না কমিউনিস্ট-এর পরে আর কী কী ট্যাগ খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে…
যাই হোক, মসজিদের কথায় ফিরা আসি–এই হামলা নিয়া সারা বিশ্বে তোলপাড়। সবচেয়ে বেশি মুসলমানরা। কেউ কেউ আবার প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে তলে তলে প্রস্তুত হইতেছে। অচিরেই অমুসলিমদের কোনো স্থাপনা বা মন্দির-গীর্জায় বড়সড় হামলা হইলে অবাক হওয়ার কিছু নাই।
মজার ব্যাপার হইলো–নিউ জিল্যান্ডের মসজিদের হামলা নিয়া যেসব মুসলিম প্রতিবাদে ফাইটা পড়ছে তাদের বেশিরভাগেই আবার শিয়া-আহমদিয়াদের মসজিদে তার চাইতে ভয়াবহ সব হামলা নিয়া চুপ থাকে। মুসলমানদের দেশে প্রতিনিয়ত গীর্জায় বোমা মারা হয়, মন্দিরে আগুন দেয়া হয়, মূর্তি ভাঙা হয়, অমুসলিমদের উচ্ছেদ করা হয়, গ্রামের আগুন দেয়া হয়, ঘরে আগুন দিয়ে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়। একই পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে মারলে সারা বিশ্ব তো দূরের কথা, বাংলাদেশেরই কোথাও কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায় নাই। মুসলমানদের প্রতিবাদের আরেকটা মজার ব্যাপার–গাজায় টুঁ শব্দটি হইলে এরা সেইভ গাঞ্জার হ্যাসট্যাগের ঝড় তোলে, অথচ ইয়েমেন নিয়ে একেবারেই চুপ!
নতুন কোনো ইস্যুতে সবাই যখন প্রতিবাদে মুখর, তখন পুরাতন কথা মনে করাইয়া দেয়া মনে হয় ঠিক না। তবুও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাইখা একটু মনে করাইয়া দেয়া–কেন দেয়া, সেইটা আপনে জ্ঞানী মানুষ–আপনে ভালো কইরাই বুঝতে পারছেন।
Leave a Reply