লিখেছেন: Mubarak Hossen Rubel
প্রশ্ন আসতেই পারে। পৃথিবীতে এত খারাপ জায়গা থাকতে আমি মসজিদে (তাবলীগে) কেন গেলাম?
হ্যাঁ । আমি মসজিদে গিয়েছি। নামাযও পড়েছি। কিন্তু উবাদা বিন সামিত(রাঃ)থেকে বর্ণিত, নিশ্চই রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি নামাযে সুরা ফাতিহা পাঠ করবে না। তার নামাযেই হবে না।-বুখারী, হাদিস নং 756, দু:খিত(?) সুরা ফাতিহা পড়তে ভুলে গিয়েছিলাম(?)কি করি বলেন, সুরা ফাতিহার চেয়ে আমার নিজের লেখা ঐ গানটা বেশ ভালো লাগে যে, তাই সুরা ফাতিহার বিকল্প হিসেবে মনে মনে পাঠ করলাম… তারা জিজ্ঞাসিল আমারে আমি হিন্দু না মুসলমান/ কোন নামেতে তাহারে ডাকি ঈশ্বর না ভগবান……(বাকীটুকু আমার প্রোফাইলে দেওয়া আছে)। তাও আবার অযু ছাড়া নামায আদায় করেছি।এখন কবুল করার দায়িত্ব মহান আল্লাপোকার।
সুরা আল ইমরান।3.104- আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সতকর্মের প্রতি। নির্দেশ দেবে ভালো কাজের আর বারণ করবে অন্যায় কাজের, আর তারাই হলো সফলকাম।সেই দলটির নামই হচ্ছে তাবলীগ।
তাবলীগ। তাবলীগ জামাত হচ্ছে একটি ধর্মীয় সংগঠন যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মুসলমানদের আল্লাহর পথে ডাকা। আল্লাহর পথে ডাকতে গিয়ে আমি নাস্তিক কি করেছি কি করি নাই। এই নিয়ে অনেক নাস্তিক ভাইয়ের অনেক কৌতুহল থাকতেই পারে। থাকতে পারে প্রশ্ন। বিস্তারিত হয়তো ব্যাখ্যা করা সম্ভব হবে না। তবুও চেষ্টা করছি। এতে নাস্তিক ভাইদের যদি বিন্দুমাত্র উপকার হয় তবে তাদের দোয়ার উছিলায় কাল কেয়ামতের দিন দু’চারটা হুর বেশিই পেতে পারি!!!
সংক্ষেপে ঃ
1. বিকাল তিনটায় পৌছার পরই আমীরের(প্রধান মন্ত্রির কি পাওয়ার?)নির্দেশে দু’রাকাত তাহিরাতুল নামায পড়ে নিলাম।(এটা নাকি পড়তে হয়। ফরয কিনা জিজ্ঝাসা করে সদোত্তর পাইনি)তার আগে কিন্তু হেদায়েত পাওয়ার জন্য সবাই সম্মিলিতভাবে দোয়া পড়েছিলাম।
2. আসরের নামাযের আগ পর্যন্ত চার জনে মিলে মসজিদ পরিষ্কার করলাম। (বাকিরা পরামর্শ করছেন।কার কি দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে।আমাকেসহ অন্য দু’জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতিদিনকার সকালের তাশকিল।যার বাংলা অনুবাদ হলো দ্বীনের দাওয়াত।)
3. আসরের নামায শেষ করে শুরু হলো প্রত্যেকের মোজাকারা। মোজাকারা চিনেন? কারো কোন কুরান পাঠে ভূল থাকলে সেটা অন্য কারো মাধ্যমে শুদ্ধ করা।কিছুক্ষণ আমিও চিল্লাইলাম!!! আর একদল চলে গেলেন বাজারে, অত:পর তারা গোত্রে গোত্রে চলে গেলেন বিকালের তাশকিলে।
4. মাগরিবের নামাজ শেষে আমীর মসজিদের মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বললেন। জানতে চাইলেন কে কে তাবলীগে যাইতে রাজি। হৈ হুল্লুর করে সংখ্যাটা বেড়েই চলছে। আর আমি বসে বসে ছাগু গুনছি একটু দুরে বসে। এক সাথী এসে আমার হাতে তসবী ধরিয়ে গেলেন। তসবি কেন? তাবলীগ জামাতের একেকটা নেকি 49 কোটি নেকীর সমান। তাই এ সুযোগ না হারানোর জন্য …..আচ্ছা নাস্তিক ভাই…তসবী হাতে নিয়ে কি পড়তে হয়?
5. তারপর শুনলাম বয়ান। এভাবে এশার নামায পর্য্ন্ত। এশার নামাযের পর আরো কিছুক্ষন…বয়ান। বয়ানরে বয়ান
6. আমীরের নির্দেশে খাদ্যের জন্য প্রস্তুতি নিলাম। বসলাম। মানুষ 12 জন। কিন্তু প্লেইট মাত্র তিনটা! চারজন্ এক প্লেটে বসতে বাধ্য হলাম। কাউকে বুঝতে দিচ্ছিনা যে আমার সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু বেচারা আমীর বহুত চালাক আদমী। আমার দিকে লক্ষ্য করে বললেন। মাষ্টার সাব…খাওয়ার আগে একটা হাদিস শুনে নেন। আমাদের নবী (সঃ) বলেছেন- এক মুসলমান ভাইয়ের খাওয়াকৃত পানি অপর মুসলমানের জন্য শিফা।মানে ঔষদ। কোন হাদিসে কত নং তা জানতে চাইলে….অপর এক মুমীন আরো একটা হাদিস শুনালেন। খাওয়ার সময় কথা বললে বরকত চলে যায়!!!
7. কি আর করা সুখে থাকতে ভুতে কিলায়। কেন যে এ জাহান্নামে আসলাম। মশারী আনতে ভুলে গিয়েছিলাম। তাই একা একাই শুতে হলো। মসজিদের ভেতর এক মশারীর নিচে দু’জন ঘুমানো যায়না। মশারা ব্যাপক ইডিয়ট। আরে ব্যাটা আল্লার উদ্দেশ্যে আসছি এইবার না হয় ক্ষমা কর। ঘুমের দোয়া পড়িনি। হয়তো তাই মশারা উত্তেজিত। ঘুমের দোয়াটা পড়ে নিলাম। তবুও মশারা………….…
আল্লাহ পাক নি:সন্দেহ মশা বা তদ্রুপ বস্তু দ্বারা নিজেকে উপমা পেশ করতে লজ্জাবোধ করেন না।বস্তুত যারা মুমীন তারা বিশ্বাস করেন যে, তাদের পালনকর্তা কর্তৃক উপস্থাপিত উপমা সম্পূর্ন নির্ভূল।26- আল বাকারাহ।(পালনকর্তা কর্তৃক উপস্থাপিত মশার কামড় মানবজাতীর জন্য কিভাবে নির্ভূল??????????????)
8.আমীর সাহেবের কড়া নির্দেশ রাত 10টার আগেই ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু ঘুম তো আর পাচ্ছেনা। অযথা জেগে থাকা। কিংবা রাত 01.30 টার অপেক্ষা। রাত ঠিক 01.30 টায় আমীর সাহেব তুলে দিলেন। তাহাজ্জুদের নামায!!!!!
9.পড়ে নিলাম(জীবনের প্রথম তাহাজ্জুদের নামায পড়লাম)।
10. আবার রাত 04.15 মিনিটে ঘুম ভাঙ্গতে হলো। একটু পর আযান হবে ।মুসল্লিরা এসে যদি দেখেন সবাই ঘুমাচ্ছে তাহলে কলংক হতে পারে।..নামাযের জন্য অপেক্ষা।
11. নামাযটা পরে নিলাম। কুরআন তেলাওয়াত করলাম(কি পড়লাম, কে জানে) অনেকক্ষণ। তারপর সুরা কেরাত। হাদীস শুনলাম। তারপর কি এক মন্ত্র পাঠ করে আমীর আমাদের তিনজনকে পাঠিয়ে দিলেন তাশকিলে। আমার সাথী অন্য দুজনকে দায়িত্ব দিলাম। তারা যেন তাশকীলের কাজটা সেরে নেয়। আমি শুধু সাথে থাকব।
12. টানা এক ঘন্টার তাশকীল শেষে আবার নামাজ। এবারের নামাজের নামটা হচ্ছে এশরাকের নামায। আট রাকাত(4+2+2) করে পড়তে হয়। তাও পড়-লাম।
13. অনেক অনুরোধ করে প্রধান মন্ত্রীর (আমীর) কাছ থেকে আমার ঘুমের অনুমতি নিলাম।
14. ঘুম থেকে উঠলাম 12.00 টায়। দাত ব্রাশ? কি এক গাছের ডাল হাতে ধরিয়ে দিল।তাই দিয়ে মেসওয়াক সেরে নিলাম।
15. আবার সেই গতকালের মতো…..
বিশেষ দুটি আয়াত।
>>আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশেষভাবে স্বীয় অনুগ্রহ দান করেন। আল্লাহ মহান অনুগ্রহদাতা। 105.আল বাকারাহ।আল্লাহর ইচ্ছায়-অনুগ্রহে আমি আবার নাস্তিক গ্রুপে চলে আসলাম।
>>তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা নিজেদেরকে পবিত্র বলে থাকে অথচ পবিত্র করেন একমাত্র আল্লাহতাআলাই। আর একমাত্র যাকে ইচ্ছা থাকে।> আল্লাহর ইচ্ছাতেই আমি আবার নাস্তিক গ্রুপে এসে পবিত্র হলাম।
আর কারো যদি কোন কিছু জানার প্রয়োজন থাকে তাহলে কমেন্ট করেন। আমি অবশ্যই আপনাদের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করব। আমি মূলত আমার জানার তাগিদেই তাবলীগে যাইনি। গিয়াছি সবাইকে জানাতে আসলে তাবলীগে কি হয়।
ধন্যবাদ। 14 এপ্রিল 2012 ইং।
Leave a Reply