দুদিন আগে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, বাংলাদেশের অনেক আইন সেকেলে হয়ে গেছে। পুরোনো ফৌজদারি আইন ও সেকেলে মানসিকতা দিয়ে তনু হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার সম্ভব নয়। নতুন ডিজিটালাইজড পন্থায় এ অপরাধের তদন্ত করতে হবে। যতই মিছিল করা হোক না কেন, পুরোনো আইন দিয়ে তা সম্ভব নয়।
ধর্ষণ একটা “আধুনিক” ক্রাইম, কিন্তু বর্তমানে ধর্ষণের তদন্ত ও বিচার করা হয় প্রায় শত বছরের বেশি পুরানো শিশু ও নারী নির্যাতন আইনের মাধ্যমে। এই পুরানো আইনের পদ্ধতিতে তনু ধর্ষণ ও হত্যার তদন্ত চলছে। তাই চিকিৎসকরা যখন জানালো যে সোহাগী জাহান তনুর প্রথম ময়নাতদন্তে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি, তখন অবাক হইনি।
প্রধান বিচারপতি পরোক্ষভাবে তাই বলতে চেয়েছেন, ধর্ষণের বিচার চেয়ে মিছিল-মিটিং না করে আগে এই ধর্ষণের জন্য আধুনিক আইন প্রণয়নের জন্য সরকারকে চাপ দেয়াটা এবং নতুন আইন তৈরী করাটা বেশি জরুরী। ওদিকে আমাদের সরকার-প্রশাসন-নেতা-নেত্রীরা আছেন জনগণের টাকা লুটপাত করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিতে।
যা হোক, “তনুর প্রথম ময়নাতদন্তে ধর্ষণের ‘আলামত নেই’” শিরোনামে যে নিউজটি বিডিনিউজ২৪ ডট কম প্রকাশ করেছে, সেখানে আরেকটা মজার ব্যাপার আসছে–“তদন্তকারী সিআইডি কর্মকর্তারা এক সেনা কর্মকর্তার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পিয়াল নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে তনুকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ এসেছে বলে কুমিল্লা ডিবি পুলিশের ওসি এ কে এম মঞ্জুরুল আলম জানিয়েছেন।” অর্থাৎ এখান এই পিয়াল নামের ছেলেটাকে বলির পাঠা বানানো হবে বলে মনে হচ্ছে।
দেশে অনেকদিন থেকেই বলতে গেলে ধর্ষণের উৎসব চলছে। মনে হচ্ছে যে কেউ যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময় ধর্ষিত হতে পারে। এই ধর্ষকরা কারা? আপনি এবং আপনার চারপাশের পুরুষেরাই! আপনি ধর্ষণ করবেন অন্যের মা-বোনদের, আর অন্যরা এসে ধর্ষণ করবে আপনার মা-বোনদের। চমৎকার একটা সিস্টেম! আর এর বিচারের কী অবস্থা, তা তো দেখতেই পারছেন। কিন্তু কাউকে ধর্ষণ করে পার পেয়ে গেলেও, অন্য কোনো ধর্ষণের কেসে ফেঁসে যেতে পারেন যদি কোনোদিন সেই মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে থাকেন, যেমন তনু কেসে ফেঁসে যাচ্ছে পিয়াল নামের ছেলেটি। তাই না খেয়ে চিঁড়ার দাম দিতে না চাইলে কোনো মেয়েকে উত্ত্যক্ত করা থেকে বিরত থাকুন।
Leave a Reply