কোরানে নাস্তিক-কাফের-বিধর্মীদের কোতলের কথাটার প্রসঙ্গ তুললে শুরু হয় ইসলামী পিছলামী! সবাই অস্বীকার করেন যে কোরানে এমন কিছু বলা নাই। যা বলা আছে তা সেই সময়ের ঘটনার প্রেক্ষিতে। আসলেই কী তাই? দেখা যাক। তবে তার আগে একটু ভূমিকা-
ইসলাম নিয়ে যে কথাটি সবচেয়ে বেশি বলা হয়, তা হলো- ইসলাম অর্থাৎ কোরান নিখুঁত, অবিকৃত ও মানব এবং জিনজাতির উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ আল্লাহর সর্বশেষ বাণী, যা পুনরুত্থান দিবস বা কেয়ামত পর্যন্ত বহাল ও কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ ইসলাম বা কোরানের নিয়ম-কানুন কোনদিন পরিবর্তন হবে না। কোরান অবতীর্ণ হওয়ার সময় মানুষের যে জীবন ব্যবস্থা নির্ধারণ করা হয়েছে, কেয়ামতের আগ পর্যন্তও মুসলমানরা সেই জীবন ব্যবস্থায় জীবন পার করে দেবে বলেই এরা প্রতিশ্রুত। এখানে তর্কের খাতিরে অনেকে মিনমিনে গলায় ইজমা-কিয়াসের প্রসঙ্গ তোলে। কিন্তু যদি বলা হয়, ইজমা-কিয়াস দিয়ে আজ পর্যন্ত আমাদের দরকারী বা কোরানের কোন আয়াতকে পরিবর্তন করা হয়েছে, তখন এরা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য, ইসলামে শুধু মাত্র আহমদিয়া/কাদিয়ানিরা মনে করে মুহাম্মদ শেষ নবী নয় বরং যুগের চহিদা মোতাবেক নবুওয়াতের ধারা অব্যহত থাকবে। কিন্তু কোরআন ও সহিহ হাদিসের বর্ণনার সাথে আহমদিদের মতবাদের ভিন্নতা থাকায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মূলধারার মুসলমানগণ প্রথম থেকেই আহমদিয়াদের বিরোধিতা করে আসছে। [উইকি]
মোট কথা হলো- কোরানের আইন সর্বকালের সর্ব মানুষের বেলায় প্রযোজ্য– এটা আল্লা এবং মুসলমানদের দাবী।
কোরানের আয়াত নিয়ে কোন ভুল ধরিয়ে দিলে তর্কের খাতিরে এরা ওই আয়াত নাজিল হওয়ার সময় বা প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে বলে। কিন্তু তারা যে দাবী করে, কোরানের আইন সর্বকালের সর্ব মানুষের বেলায় প্রযোজ্য- সেই দাবীর কথা এখানে চেপে যায়। সেটা মনে করিয়ে দিলে যা পাবেন সেটা হলো ইসলামী পিছলামীর জলন্ত উদাহরণ। যেমন, কোরান বুঝে পড়তে হবে, আগে-পরের আয়াত বিবেচনায় আনতে হবে, তাফসির সহ পড়তে হবে, বাংলায় না বুঝলে আরবীতে পড়তে হবে, ইত্যাদ ইত্যাদি।
ওদিকে কোরানের স্পষ্ট করে বলা আছে, “বুঝার ও মনে রাখার জন্য কুর-আনকে আমি অবশ্যই সহজ করেছি।” সূরা কামারের চার চারটে জায়গায় একটু পর পর এই আয়াত নাজিল হইছে। কোন সন্দেহ নাই, আল্লায় নিজেই বুঝার ও মনে রাখার জন্য কোরানকে সহজ করে দিয়েছে। এরপর অন্যের কাছ থেকে উপদেশ বা পাঠ নিয়ে এটা আলাদা ভাবে বুঝার কিছু নাই, অর্থাৎ অক্ষর জ্ঞান থাকলে নিজে পড়লেই কোরান বুঝতে পারার কথা। এসব আয়াতের তাফসিরেও একই কথা বলা হয়েছে- “যে জীবন বিধান মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনকে সমৃদ্ধির পথে ইহকালে ও পরকালে শান্তির পথে পরিচালিত করবে, কোরাণে তা সমৃদ্ধ ভাষাতে সহজ সরল ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেন সাধারণ মানুষের তা বোধগম্য হয়।” এসব নিয়ে আগের পোস্টে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে।
এবার মূল প্রসঙ্গে আসি- কোরানের আদৌ নাস্তিক-কাফের-বিধর্মীদের হত্যার আদেশ দেয়া হয়েছে কিনা। যদি সেরকম আদেশ দেয়া হয় তাহলে মুসলমানরা আল্লার আদেশ মেনে বিধর্মীদের হত্যা করবে। আর তার বিচার হবে না এই কারণে যে এটা তাদের “ধর্মীয় অধিকার”।
এই পোস্টে পাঁচশ’র বেশি আয়াত আছে যেখানে নাস্তিক-কাফের-বিধর্মীদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। তার মধ্যে কোথায় কোথায় সরাসরি হত্যার আদেশ দেয়া হয়েছে, সেটা দেখা যাক-
১. সূরা বাকারারা ১৯১ নাম্বার আয়াত-
//আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুতঃ ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি।// (২:১৯১)
আরেকটা অনুবাদ:
//তাদের যেখানেই পাবে হত্যা করবে, যে স্থান থেকে তারা তোমাদের বের করেছিলো, তোমরাও তাদের সে স্থান থেকে বের করে দাও। দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা উৎপীড়ন হত্যার চেয়েও বেশী খারাপ। কিন্তু মসজিদুল হারামের নিকট তাদের সাথে যুদ্ধ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা [প্রথমে] সেখানে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে। যদি তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে; তবে তাদের হত্যা কর। যারা ঈমানের [শিখাকে] দমন করতে চায় এটাই হচ্ছে তাদের পুরস্কার।// (২:১৯১)
সব জায়গায় কোন প্রকার “যদি/তবে” ছাড়াই প্রথমেই সরাসরি হত্যার কথা বলা হয়েছে। শুধু মসজিদের কাছে লড়াই নিষেধ করেছে যদি না বিধর্মীরা সেখানে মুসলমানদের আগে আক্রমন করে।
এই আয়াতের দুটা তাফসির আছে যেখানে আয়াতের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করা হয়েছে। এবং বলা হয়েছে “যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়, তবে তোমাদেরও তার সমুচিত জবাব দেওয়ার অনুমতি থাকলো।”
এবার এই আয়াতের আগের এবং পরের আয়াত দেখা যাক।
অনুবাদ#১
১৯০। আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।
অনুবাদ#২
১৯০। যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তোমরাও আল্লাহ্র পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর ২০৪। কিন্তু সীমা লঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সীমালঙ্ঘনকারীগনকে ভালোবাসেন না।
অনুবাদ#১
১৯২। আর তারা যদি বিরত থাকে, তাহলে আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু।
অনুবাদ#২
১৯২। কিন্তু তারা যদি বিরত হয়, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ বারে বারে ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু।
দুইটা আয়াতেই যদি/তবে-এর কথা কথা উল্লেখ আছে। তার মানে আমরা ধরে নিতে পারি, এখানে যদি কেউ আক্রমন করে তবে আত্মরক্ষার জন্য হত্যার কথা বলা হয়েছে। এর চাইতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আত্মরক্ষার জন্য জুডো-ক্যারাটে-কুংফু-মার্শাল আর্ট ইত্যাদির রুলটা আরো বেশি মানবিক এবং উন্নত মানের- আত্মরক্ষার জন্য শত্রুর আঘাত এড়িয়ে যাওয়া বা প্রতিহত করা, কিন্তু কোন ভাবেই শত্রুকে পাল্টা-আক্রমন করা নয়।
২. সূরা মায়েদাহের ৩৩ নাম্বার আয়াত-
//যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। ৫:৩৩//
আরেকটা অনুবাদ:
//৩৩। যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায় এবং সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করে পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের প্রসারের জন্য। তাদের শাস্তি হচ্ছে; তাদের হত্যা করা হবে, অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে, অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদের দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। পৃথিবীতে এটাই হবে তাদের লাঞ্জনা এবং পরকালে তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।//
তাফসির:
//এখানে দ্বৈত অপরাধের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমতঃ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা, দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্র সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। এখানে এরূপ ক্ষেত্রে চার ধরণের শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে এর যে কোনটি উপরোক্ত ব্যক্তির প্রতি প্রযোজ্য। এগুলি হল : শিরচ্ছেদ, ক্রুশে হত্যা, অঙ্গচ্ছেদ অথবা নির্বাসন। এই-ই ছিল সে যুগে অপরাধীদের শাস্তির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই নিয়ম কয়েকশত বৎসর পর্যন্ত পৃথিবীতে চলে এসেছে।//
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টা মানা গেল। কিন্তু “আল্লাহ্র সাথে বিশ্বাসঘাতকতা”-এর মানে কী? এর মানে হলো আল্লা-নবীরে না মানলে অর্থাৎ নাস্তিক-কাফের-বিধর্মী হলে তাদেরকে হত্যা করা হবে। কারা করবে? মুসলমানেরা!
এই আয়াতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ। আগের আয়াতের প্রসঙ্গ ভিন্ন। শুধু পরের আয়াতে বলা হয়েছে, “কিন্তু যারা তোমাদের গ্রেফতারের পূর্বে তওবা করে; জেনে রাখ, আল্লাহ ক্ষমাকারী, দয়ালু।” অর্থাৎ আল্লা-রসুলরে মানে না, এইটা প্রচার হওয়ার পর থেকে তারে ধরার আগ পর্যন্ত সময়ে যদি আবার মুসলমান হয়ে যায় অর্থাৎ আল্লা-নবীরে মেনে নেয়, তাহলে ক্ষমা পাবে।
৩. সূরা তাওবার ৫ নাম্বার আয়াত দিয়ে শুরু করা যাক-
//অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ৯:৫//
আরেকটা অনুবাদ:
//০৫। কিন্তু যখন নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হবে তারপরে যুদ্ধ কর, এবং মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা কর, এবং তাদের বন্দী কর, তাদের অবরোধ কর শত্রুকে [যুদ্ধে] ফাঁকি দেয়ার জন্য ওঁৎ পেতে অপেক্ষা কর। কিন্তু যদি তারা অনুতপ্ত হয়; এবং নিয়মিত সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।//
তাফসিরে দেখি-
//”নিষিদ্ধ মাস” অর্থাৎ পূর্ববর্তী আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে চুক্তি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার পরে তা কার্যকর করার জন্য যে চারমাস সময় দেয়া হয়েছে, সেই চার মাসকে নিষিদ্ধ মাস রূপে অভিহিত করা হয়েছে।// নিষিদ্ধ চারটি মাস হলো ইসলামিক ক্যালেন্ডারের প্রথম, সপ্তম, একাদশ ও দ্বাদশ মাস। এর মধ্যে চুক্তি নবায়ণ না করলে সোজা হত্যা করার নির্দেশ। কিন্তু চুক্তিটা কিসের?
এটা জানতে হলে যেতে হবে একই তাওবা সূরার ৩ নাম্বার আয়াতে, সেখানে বলা আছে-
//আর মহান হজ্বের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে লোকদের প্রতি ঘোষণা করে দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ মুশরেকদের থেকে দায়িত্ব মুক্ত এবং তাঁর রসূলও। অবশ্য যদি তোমরা তওবা কর, তবে তা, তোমাদের জন্যেও কল্যাণকর, আর যদি মুখ ফেরাও, তবে জেনে রেখো, আল্লাহকে তোমরা পরাভূত করতে পারবে না। আর কাফেরদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও।//
অর্থাত তওবা করতে হবে! মানে তারা যে নাস্তিক-কাফের-বিধর্মী হয়েছে, সেখান থেকে তওবা করে আল্লা-নবীর অনুগত্য হতে হবে। সেটাই ৫ নাম্বার আয়াতে স্পষ্ট করে বলা- “যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও।” অর্থাৎ মুসলমান না হলেই কোতল।
পরের আয়াতে আরো স্পষ্ট-
//আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌছে দেবে। ৯:৬//
বিধর্মীদের আশ্রয় দিয়ে এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সে আল্লার বাণী শুনতে পায়। আর আল্লার বাণী তারাই শুনতে পাবে যারা কিনা মুসলমান!
এর পরের আয়াতগুলোতে সেই একই কথা- মুসলমান হলে ভালো, নয়তো এদের সাথে যুদ্ধ!
এখানে উল্লেখ্য, মুসলমান দেশে বিধর্মীরা আরেকটা চুক্তির মাধ্যমে থাকতে পারে- জিজিয়া কর!
৪. সূরা নিসার আয়াত নাম্বার ৯১
//এখন তুমি আরও এক সম্প্রদায়কে পাবে। তারা তোমাদের কাছেও স্বজাতির কাছেও এবং নির্বিঘ্ন হয়ে থাকতে চায়। যখন তাদেরকে ফ্যাসাদের প্রতি মনোনিবেশ করানো হয়, তখন তারা তাতে নিপতিত হয়, অতএব তারা যদি তোমাদের থেকে নিবৃত্ত না হয়, তোমাদের সাথে সন্ধি না রাখে এবং স্বীয় হস্তসমূহকে বিরত না রাখে, তবে তোমরা তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। আমি তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে প্রকাশ্য যুক্তি-প্রমাণ দান করেছি। ৪:৯১//
আরেকটা অনুবাদ:
//৯১। তোমরা কিছু লোককে পাবে যারা তোমাদের ও তাদের নিজ সম্প্রদায়ের নিকট থেকে নিরাপত্তা চাইবে। যখনই তাদের পুনরায় প্রলোভিত করা হবে তারা তাতে বশীভূত হয়ে পড়বে। যদি তারা তোমাদের নিকট থেকে ফিরে না যায় অথবা শান্তি [প্রস্তাবের জামানত] প্রেরণ না করে, তাছাড়া তাদের হাতকে সম্বরণ না করে, তবে তাদের যেখানেই পাবে গ্রেফতার করবে ও হত্যা করবে। আমি তোমাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট যুক্তি সরবরাহ করছি।//
এখানে স্পষ্ট ইসলাম ত্যাগকারীদের হত্যার কথা বলা হইছে। যদি কেউ মুসলমান হয়, এবং পরে ইসলাম ত্যাগ করে কিন্তু আর ইসলামে ফিরে আসে না, তাদেরকে হত্যার আদেশ দেয়া হয়েছে।
৫. সূরা নিসার আয়াত নাম্বার ৮৯
//তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না। ৪:৮৯//
আরেকটা অনুবাদ:
//৮৯। তারা কিন্তু ইহা ইচ্ছা করে যে, তোমরা তাদের মত ঈমানকে ত্যাগ কর এবং এরূপে তোমরা তাদের শ্রেণীভুক্ত হয়ে যাও। সুতরাং [যা নিষিদ্ধ] আল্লাহ্র পথে [তা ত্যাগ] বা হিজরত না করা পর্যন্ত তাদের মধ্যে থেকে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। কিন্তু যদি তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে দল ত্যাগ করে, তবে তাদের যেখানে পাবে গ্রেফতার করবে এবং হত্যা করবে। এবং [এরূপ ক্ষেত্রে] তাদের মধ্যে থেকে কোন বন্ধু বা সাহায্যকারী গ্রহণ করবে না।//
কোরানের অন্যতম মারাত্মক আয়াতের একটা। প্রধান মতবাদগুলার মধ্যে ইহুদি এবং হিন্দু ধর্মে তাদের মত হওয়ার জন্য ইসলাম ধর্মের কাউরে নিজেদের ধর্মে আহ্বান করে না। তাই প্রথম কথাটাই ভুল। বাকিটার কথা হলো- ইসলামের পথে দাওয়াত দেয়া হলো। কবুল করলে ভালো। কবুল না করলে সোজা কোতল।
আলোচনার সুবিধার জন্য এর আগের আয়াত দেখা যাক–যেখান থেকে সূরা নিসার রুকু ১২ শুরু হয়েছে। আগের আয়াত-পরের আয়াত নিয়ে ক্যাচালটা এড়িয়ে যাওয়া যাবে–
৮৮। তোমরা কেন মোনাফেকদের সম্বন্ধে দু’দলে বিভক্ত হয়ে গেলে ৬০৬ ? তাদের [মন্দ] কর্মের জন্য আল্লাহ্ তাদের পরিত্যাগ করেছেন। আল্লাহ্ যাদের [সৎ] পথ থেকে বহিষ্কৃত করে দেন, তুমি কি তাদের [সৎ পথে] পরিচালিত করতে পারবে ? আল্লাহ্ কাহাকেও পথভ্রষ্ট করলে, তুমি তাদের জন্য কখনও কোন সুপথ পাবে না।
পরের আয়াত–
৯০/ কিন্তু যারা এমন সম্প্রদায়ের সাথে মিলিত হয় যে, তোমাদের মধ্যে ও তাদের মধ্যে চুক্তি আছে অথবা তোমাদের কাছে এভাবে আসে যে, তাদের অন্তর তোমাদের সাথে এবং স্বজাতির সাথেও যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক। যদি আল্লাহ ইচ্ছে করতেন, তবে তোমাদের উপর তাদেরকে প্রবল করে দিতেন। ফলে তারা অবশ্যই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করত। অতঃপর যদি তারা তোমাদের থেকে পৃথক থাকে তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের সাথে সন্ধি করে, তবে আল্লাহ তোমাদের কে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ দেননি।
৬. সূরা আনফালের ১৭ নাম্বার আয়াত-
//সুতরাং তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। আর তুমি মাটির মুষ্ঠি নিক্ষেপ করনি, যখন তা নিক্ষেপ করেছিলে, বরং তা নিক্ষেপ করেছিলেন আল্লাহ স্বয়ং যেন ঈমানদারদের প্রতি এহসান করতে পারেন যথার্থভাবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ শ্রবণকারী; পরিজ্ঞাত। ৮:১৭//
আরেকটা অনুবাদ:
//১৭। তোমরা তাদের হত্যা কর নাই; আল্লাহ্ করেছেন যখন তুমি [হাত ভর্তি ধূলা] নিক্ষেপ করেছিলে; সেটা তোমার কাজ ছিলো না, প্রকৃতপক্ষে [তা ছিলো] আল্লাহ্র; ইহা এ জন্য যে আল্লাহ্ যেনো বিশ্বাসীদের উত্তমরূপে পরীক্ষা করতে পারেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ [সব] শোনেন এবং সব জানেন।//
ভয়ংকর ব্যাপার হলো, বিধর্মীদের খুন করার পর কোন প্রকার অপরাধবোধ যাতে না জন্মে, সেজন্য সমস্ত দায়ভার আল্লায় নিজেই নিতেছে।
ইংরেজী অনুবাদ বা আরো তাফসিরের রেফারেন্স দিয়ে আরো বড় পরিসরে ব্যাপারগুলো দেখানো যায়। তাতে একই কথা বার বার ঘুরে ফিরে আসবে। আবার কোথাও কোথাও কোরানের স্ববিরোধিতাও চলে আসে, সেটা ভিন্ন আলোচনা বলে এখানে আনা হলো না।
এবার বলেন, কোরানে নাস্তিক-কাফের-বিধর্মীদের কোতলের কথাটা আছে নাকি নাই?
সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার আপনাদের।
সম্পর্কযুক্ত দুইটা পোস্ট:
কোরানে নাস্তিক-কাফের-বিধর্মীদের জন্য পরম-বাঁশ-প্রদায়ক আল্লার বাঁশগুচ্ছ
ঈশ্বর বলে কেউ থেকে থাকলেও তার সাথে ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত ঈশ্বরের কোন সম্পর্ক নাই
Leave a Reply