• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

পাল্লাহু । pAllahu

দাঁড়িপাল্লা ধমাধম-এর বাংলা ব্লগ

  • পাল্লাব্লগ
  • চুতরাপাতা
  • মহাউন্মাদ
  • ধর্মকারী
  • রেফারেন্স
  • ট্যাগস

উগ্র হোন, গালিবাজ হোন, খারাপ হোন

You are here: Home / পাল্লাব্লগ / উগ্র হোন, গালিবাজ হোন, খারাপ হোন
March 5, 2017

দেশভাগের সময় বাংলাদেশের ব্রাহ্মণ ও উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বিশাল বিশাল বাড়িঘর, ধনসম্পত্তি, জায়গা-জমি, পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু ফেলে কোনো রকমে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কাহিনী শুনলে মানবতার খাতিরে খারাপ লাগলেও ইতিহাসকে যখন সাক্ষী মানি–তখন ঠোঁটের কোণে একটু ক্রুর হাসি ফুটে ওঠে। সত্য বড় নির্মম, সেই সাথে তিতাও!–এ কথা একটু বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা না করলে হয়তো ভুল বোঝার অবকাশ থেকে যাবে।

বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ–বাংলার আদিবাসী কোমদের–ডোম, চণ্ডাল, ডোলাবাহী, চর্মকার, শবর প্রভৃতি–সমাজের নিচু স্তরের শ্রমিকশ্রেণীর জীবনচিত্র। এসব কোমদের নিজস্ব রীতি-নীতি-সংস্কৃতি ছিল। আর রাজার ধর্মই প্রজার ধর্ম–ওই সময়কালে বাংলাদেশে ছিল বৌদ্ধদের শাসন। তাই প্রথাগত ধর্ম হিসাবে তারা বৌদ্ধধর্মকে অনুসরণ করত। তার আগে? যখন বৌদ্ধ শাসকেরা বাংলায় আসে নি, তখন, বলা বাহুল্য, এরা তাদের নিজস্ব ‘লোকায়তিক ধর্ম’ নিয়েই থাকত।

তো এই বাংলাদেশের চর্যাপদ নেপাল গেলো কিভাবে? ধারণা করা হয়, বাংলার এই আদিবাসী ‘বৌদ্ধরা’ হিন্দুদের দ্বারা বিতাড়িত হয়েছিল। ওরা হয়তো বাংলাদেশ থেকে নেপাল হয়ে তিব্বতের দিকে পালাচ্ছিল।

কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দু এলো কিভাবে? রাজনৈতিক পালাবদলে বৌদ্ধ পাল বংশের পরে দক্ষিণাত্য থেকে আগত হিন্দু সেন বংশের আগমন। কিন্তু তখনো হিন্দুধর্ম বলতে যে ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মের কথা বুঝায়–সেটা অতটা গেড়ে বসেনি। কিন্তু তার আয়োজন শুরু হয়ে গেছে আরো কয়েকশ বছর আগে থেকে।

নীহাররঞ্জন রায়ের ‘বাঙলীর ইতিহাস – আদিপর্ব’তে দেখি বাংলাদেশে ‘বৈদিক ব্রাহ্মণ’ আসার দুইটি কাহিনী আছে–“একটি কাহিনী মতে, বাংলাদেশে যথার্থ বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ না থাকায় এবং যজ্ঞাগ্নি যথানিয়মে রক্ষিত না হওয়ায় রাজা শ্যামলবর্মণ (বোধ হয় বর্মণরাজ সামল বর্মণ) কান্যকুব্জ (কোনও কোনও গ্রন্থমতে, বারাণসী) হইতে ১০০১ শকাব্দে পাঁচজন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ আনয়ন করেন। অপর কাহিনী মতে সরস্বতী নদীতীরস্থ বৈদিক ব্রাহ্মণেরা যবনাক্রমণের ভয়ে ভীত হইয়া বাংলাদেশে পলাইয়া আসেন, এবং বর্মণরাজ হরিবর্মণের পোষকতায় ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়ায় বসবাস আরম্ভ করেন।”

[প্রাচীন বাংলার ইতিহাস পড়তে গেলে দুইটি জায়গার নাম প্রায়ই ঘুরে ফিরে আসে–একটি হলো বিক্রমপুর, আরেকটি কোটালিপাড়া। আপাতত বিক্রমপুর থাক; কোটালিপাড়ার দিকে একটু নজর দেই। নীহাররঞ্জন রায় দেখান–“কোটালিপাড়ায় প্রাপ্ত ষষ্ঠ শতকের একটি লিপিতে চন্দ্ৰবৰ্মণকোট বলিয়া একটি দুর্গের উল্লেখ আছে। সামরিক প্রয়োজনে এই দুর্গ-নগর গড়িয়া উঠিয়াছিল, সন্দেহ নাই। কিন্তু এই লিপিতে এবং এই স্থানে প্রাপ্ত সমসাময়িক অন্যান্য লিপিতে স্থানটি যে নৌবাণিজ্যপ্রধান ছিল তাহারও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এই কোট হইতেই বর্তমান কোটালিপাড়া নামের উদ্ভব, এরূপ অনুমান একেবারে অযৌক্তিক নয়।” কিন্তু তখনও এই নগর সবে মাত্র গড়ে উঠতেছে। আরো তথ্য ঘাটলে দেখা যায়–“ষষ্ঠ শতকে ফরিদপুরের কোটালিপাড়া অঞ্চল নূতন সৃষ্ট হইয়াছে মাত্র, তখনও তাহার নাম ‘নব্যারকাশিকা’, এবং সম্ভবত এই জনপদ তখন প্রায় সমুদ্রতীরবর্তী। বাখরগঞ্জের ‘নাব্য’ অঞ্চল তাহার অনেক পরের সৃষ্টি।” পঞ্চম শতকের দিকে সবে দ্বীপের মত জেগে ওঠে–পদ্মার একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ে। এর দক্ষিণ-পশ্চিমে ছিল সুন্দরবনের সীমা। ঘাঘর নদীটি এই অঞ্চলটিকে সুন্দরবন থেকে আলাদা করে রাখে। (পরের দিকে ধীরে ধীরে দক্ষিণ পূর্বে বরিশাল অঞ্চলের দ্বীপগুলোর (চন্দ্রদ্বীপ) সৃষ্টি হয়। আর এই ঘাঘর নদীটি উত্তরে মরে যেতে থাকে, দক্ষিণে কালীগঙ্গা এবং আরো পরে বালেশ্বর নদী হিসাবে থেকে যায়।)]

১০০১ শকাব্দ মানে (১০০১+৭৮) ১০৭৯ খ্রিস্টাব্দের কাহিনী। কিন্তু এমনিতে বাংলাদেশে ব্রাহ্মণ আসার সূত্রপাত হয় পঞ্চম-ষষ্ঠ-সপ্তম শতকের দিকে। এরাই প্রায় তিনশ-সাড়ে তিনশ বছর ধরে একটু একটু করে বাংলাদেশে বৈদিক, আর্য ও পৌরাণিক ব্রাহ্মণ্যধর্মের সূত্রপাত ঘটায়। আর্যদের গতিবিধি লক্ষ্য করতে দেখা যায়–এরা এমনিতেই উত্তর-পশ্চিম থেকে ক্রমশ পূর্ব-দক্ষিণে সরে আসছিল। আর ওই সময়ে তাদের যে ধারাটা বাংলাদেশের দিকে আসছিল, তারা খুব সম্ভবত পশ্চিম থেকে মুসলমানদের আক্রমণে সরে আসছিল। তো বাংলাদেশে এরা যখন ‘শরনার্থী’ হিসাবে আসা শুরু করল, তখন এই বাংলার সহজ-সরল আদিবাসী মানুষেরা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, অন্ন দিয়েছে। কেউ কেউ আবার জায়গাজমি কিনে বসবাস শুরু করে। এরকম জায়গা দেয়া, কেনা-বেচা বা শাসকদের কাছ থেকে দানপ্রাপ্তের প্রচুর ঐতিহাসিক তথ্য বিদ্যমান। এদের ‘লাইফস্টাইল’ যে স্থানীয় জনসাধারণের থেকে কিছুটা হলেও উন্নত ছিল, সে বলাই বাহুল্য। ধীরে ধীরে বাংলার শাসক ও অভিজাতশ্রেণী এদের ‘লাইফস্টাইল’ দ্বারা প্রভাবিত হতে শুরু করল। ব্রাহ্মণেরাও সেই সুযোগে এই শাসক শ্রেণীর সহায়তায় পৌরাণিক কাহিনী রচনা (বই লেখা), একটু একটু করে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম প্রচার করা, মন্দির-মূর্তি বানিয়ে পূজার্চনা করা, স্থানীয়দের শেখানো–এভাবেই হিন্দুধর্মের সূত্রপাত এই বাংলায়। শেষে যখন হিন্দুরাই রাজা হয়ে গেল, ব্রাহ্মণেরা মন্ত্রী হিসাবে দেশ চালাতে লাগল–রাজার ধর্মই হয়ে গেলো প্রজার ধর্ম। আর যারা ধর্মান্তরিত হতে চায় নি, তারা কেউ মারা পড়ল, কেউ প্রাণ ভয়ে উত্তর-পূর্বের পাহাড়িয়া-দুর্গম অঞ্চলের দিকে সরে গেল, পালিয়ে গেল।

ইতিহাসের চাকা ঘোরে। দেশে ইসলাম এলো। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস–যে ব্রাহ্মণ ও উচ্চবর্ণের হিন্দুরা এই দেশে উড়ে এসে জুড়ে বসেছিল, তারাই আবার এদেশ ছেড়ে ঘরবাড়ি-জায়গা-জমি ফেলে পালাতে লাগল। বিষয়টা মানবিকতা বা বর্তমান নৈতিকতার মানদণ্ডে খারাপ লাগলেও এটাই ইতিহাসের শিক্ষা! বাংলাদেশে থেকে যাওয়া বেশিরভাগ হিন্দু সমাজের সেই নিম্নবর্ণের লোক। যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তারাও বেশিরভাগ সেই নিম্নবর্ণের হিন্দু; যারা আগে বৌদ্ধ ছিল–বৌদ্ধ শাসকদের প্রভাবেই হয়েছিল নিশ্চয়ই; তার আগে তারা পালন করত নিজেদের কৌম সমাজের রীতিনীতি… আর তার আগে?… সৎ সাহস নিয়ে ইতিহাস খুঁজলে খুঁজে পেতে অসুবিধা হবে না…

তত আগে গিয়ে এই লেখা আর বড় না করি। তুলনামূলক ভাবে আদিকালের বৌদ্ধরা হিন্দুদের চেয়ে বেশি ‘সভ্য’ ছিল, তখনকার হিন্দুরা এখনকার মুসলমানদের চেয়ে বেশি ‘সভ্য’ ছিল–এই অর্থে যে, আমরা দিন দিন শিক্ষিত হচ্ছি, সভ্য হচ্ছি বলে দাবী করি। সেই দাবীর তুলনায় আমাদের যে কর্মকাণ্ড চারদিকে দেখি, সেই তুলনায় আমাদের পূর্বপ্রজন্ম অনেক বেশি ‘মানবিক’ ছিল।

ইতিহাস সাক্ষী–বাংলাদেশে বর্বরতার সূত্রপাত হয়েছে উত্তর ভারতীয় আর্য-বংশধরদের হাত ধরে, বর্বরতা লালিত-পালিত হয়েছে ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুদের হাতে, আর (এখন পর্যন্ত) বর্বরতার চরম সীমা আমদানি হয়েছে আরবীয় ইসলামের মাধ্যমে।

২) বাংলাদেশে হিন্দুধর্মের প্রসারের পেছনে মন্দির-মূর্তির ভূমিকা থাকলেও মূল ভূমিকা হিন্দুধর্ম-গ্রন্থগুলির। ইসলামের প্রসারের পেছনে মসজিদের ভূমিকার সাথে আরো আছে ইসলামধর্মীয়-গ্রন্থ এবং বর্তমানের ওয়াজ কালচার।

চার্বাকরা যখন ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিরুদ্ধে লেগেছিল, তখন (দেবীপ্রসাদ বলেন)–“চার্বাকদের ব্ৰাহ্মণ্যবিদ্বেষ নিছক বিদ্বেষ ছিল না, রীতিমত দার্শনিক ভিত্তির উপর তার প্রতিষ্ঠা ছিল এবং বিপক্ষের বহুমুখী প্ৰচেষ্টা সত্ত্বেও এ মতবাদকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে দেওয়া কোনোদিন সম্ভব হয়নি।” তখনকার দিনের ভাববাদীরা চার্বাকদের যুক্তির ক্ষমতা বুঝত। চার্বাকরা ঈশ্বর, আত্মা, পরলোক সবাই উড়িয়ে দিত। তখনকার দিনের ভাববাদীরা আর সব মতাবাদের চেয়ে বেশি ভয় পেত চার্বাকবাদকে। চার্বাকরা লেখালেখি করত। কিন্তু ভাববাদীরা শাসক শ্রেণীর সহায়তায় এদের সমস্ত লেখালেখি ধ্বংস করে দেয়, এদেরকে উৎখাত করার চেষ্টা চালালেও, শারীরিক ভাবে আক্রমন করলেও সেই সেই চার্বাক দর্শন বা নাস্তিক্যবাদ এখনো আছে। চার্বাকরা কেমন ছিল, কী করত, কী বলত–তার কিছু কথা আবার ভাববাদীরাই সংকলন করে রেখেছে। মাধবাচাৰ্য তার ‘সর্বদর্শনসংগ্রহ’তে লিখেছেন–সেইকালে চার্বাকরা নাকি বলত যে, “মৃতের উদ্দেশে প্ৰেতকাৰ্য প্রভৃতি ব্ৰাহ্মণদের জীবনোপায় ছাড়া আর কিছু নয়। যারা তিন তিনটে বেদ রচনা করেছে তারা বেবাক ভণ্ড-ধূর্ত-নিশাচরের দল।”

এইকালের নাস্তিকরাও ধর্মপ্রচারকদেরকে ভণ্ড, লুইচ্চা, প্রতারক–এরকম ‘গালি’ দিয়ে থাকে, কিন্তু যুগের তুলনায় সেই যুগে চার্বাকরা যেভাবে সরাসরি বেদ রচনাকারীদেরকে ভণ্ড-ধূর্ত-নিশাচর বলত, তার তুলনায় এই যুগের উগ্র, গালিবাজ, খারাপ নাস্তিকদের ‘গালাগালি’ কিছুই না। ব্রাহ্মণ্যবাদীরা যেভাবে চার্বাকদের লেখালেখি ধ্বংস করে দিয়েছিল, তাদের উপর যে বর্বর আক্রমন চালিয়ে উৎখাত করেছিল, এখনকার দিনের ধর্মবাদীরাও সেই একই ভাবে নাস্তিকদের বই ব্যান করে, পাবলিশারদের হত্যা করে, লেখক-ব্লগারদের কুপিয়ে মারে। কিন্তু শারীরিক ভাবে আক্রমন করেও ‘আইডিয়া’ ধ্বংস করা যায় নি। উলটো পরিণতিতে দেখা যায়–ব্রাহ্মণ্যবাদীরাই শেষ পর্যন্ত লেজ গুটিয়ে পালাচ্ছে। মুসলমানদের আক্রমনে হয়তো এ যুগের নাস্তিকরাও শেষ হয়ে যাবে এভাবে–কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদেরও পরিণতি হবে ওই ব্রাহ্মণ্যবাদীদের মতই। ইতিহাস তাই বলে।

৩) ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কিছু রেখে যেতে চাইলে আরো উগ্রতা, আরো গালাগালি, আরো ক্ষুরধার লেখা এবং সেগুলার যথাযথ রক্ষাণাবেক্ষণে নজর দেয়া উচিত বলে মনে করি। (নারীবাদ, নারীবাদীসহ যে কোনো ‘বাদী’দের জন্যও একই কথা–লেখালেখিতে আরো উগ্র হোন, আরো ‘গালাগালি’ করেন, আক্রমনের তীব্রতা আরো বাড়ান…) বই লেখেন, ওয়েবসাইটে লেখেন, ফেসবুকে লেখেন, পাবলিক ব্লগে লেখেন, ব্যাকআপ রাখেন একাধিক জায়গায়–নিজস্ব ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে বা ফ্রি ব্লগে… পড়েন, অন্যদের পড়ান, তথ্য শেয়ার করেন, নিজস্ব চিন্তাভাবনা উন্নত করেন, যুক্তিতে ধার দেন, যা ইচ্ছা তাই লেখেন, মনে যা আছে তাই লেখেন, নিয়মিত লেখেন, একলাইন, একটি শব্দ–তাও লিখে রাখেন… এগুলোই ভবিষ্যত প্রজন্মকে নিজস্ব পথ নির্ধারণ করে নিতে সহায়তা করবে।


 

আপডেট (মার্চ ০৬, ২০১৭) :

[…দীর্ঘ পোস্টটার একটু রেশ টানা যাক–ইতিহাস সাক্ষী–যখন থেকে শাসন-শোষণের রাজনীতি শুরু হয়েছে, তখন থেকেই যেন একটা অলিখিত আইন হয়ে উঠেছে–রাজার ধর্মই প্রজার ধর্ম।

পঞ্চম শতকের পূর্বে দলিল-পত্রে বাংলার ইতিহাস খুব একটা পাওয়া যায় না। যখন থেকে পাওয়া যায়, তখন দেখা বাংলার শাসক শ্রেণীরা বৌদ্ধ। তবে বৌদ্ধধর্ম নিশ্চয়ই বাংলার ভিতর থেকে সৃষ্টি হওয়া কোনো ধর্ম নয়। এটা ওই শাসকশ্রেণীর সাথে বাংলার বাইরে থেকেই এসেছে।
আবার ওই সময় থেকেই বাংলাদেশে ব্রাহ্মণেরা আসতে শুরু করেছে। প্রায় পাঁচশত বছরে ধরে তারা বাংলায় হিন্দুধর্মের ভিত রচনা করেছে, একসময় বৌদ্ধশাসকদের উৎখাত করে নিজেরা রাজা হয়ে বসেছে। তখন এখানকার লোকেরা হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে শুরু করেছে।
তারপর আবার পরে ইসলাম এসেছে আরব থেকে। মুসলমানরা ক্ষমতাবলে হিন্দুদের সরিয়ে নিজেরা ক্ষমতা দখল করেছে…হিন্দুরা মুসলমানর হতে শুরু করেছে।
বৌদ্ধরা যেমন বাংলার সবাইকে বৌদ্ধ বানাতে পারে নি, তেমনি হিন্দুরাও সব বৌদ্ধদেরকে হিন্দু বানাতে পারে নি, তেমনি মুসলমানরাও সব হিন্দুকে মুসলমান বানাতে পারে নি। তবে এটা প্রক্রিয়াধীন–বাংলাদেশে ধীরে ধীরে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে।
যারা পালানোর, তারা পালাচ্ছে; আর যাদের পালানোর জায়গা নেই বা উপায় নেই, তারা শাসকশ্রেণীর সুনজর পাওয়ার আশায় শাসকদের ধর্ম গ্রহণ করছে। বলা বাহুল্য, এটা সবাই স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে নি, বেশিরভাগই জোর-জবরদস্তির শিকার হয়েছে, বাধ্য হয়েছে। এটা শুধু আমাদের মত অনুন্নত অশিক্ষিত বর্বর দেশগুলোতেই হয় না, উন্নত দেশেও একটু ভালো থাকা-পড়া-খাওয়ার আশায়, বা বাড়তি কিছু সুবিধা পাওয়ার জন্যে অনেকেই শাসকশ্রেণী বা সংখ্যাগুরুর ধর্ম গ্রহণ করে।
প্রকৃতি বা আমাদের চারপাশে যা কিছু হয়–সবই স্বাভাবিক! কিন্তু এই সব ‘স্বাভাবিকতা’ ভালো, না কি খারাপ, সেটা বিচার-বিশ্লেষণ করা এবং ক্ষতিকর দিকটা বর্জন করা, ভালো দিকটার চর্চা করার ক্ষমতা আমাদের আছে–অন্তত সভ্য উন্নত শ্রেণীর মানুষেরা তাই করে। ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। কেউ কোন ধর্ম পালন করবে, সেটা কেউ কাউকে বলে দিতে পারে না বা জোর করতে পারে না–উচিতও নয়। আগেকার দিনে ওমন হয়েছে, তাই বলে এখনও হবে–এটা মেনে নেয়া যায় না–অন্তর আমরা যখন নিজেদেরকে সভ্য বলে দাবী করি–তখন।
এই জোরাজুরিতে আপত্তি করলেও সেই আদিকাল থেকেই এমনই হয়ে আসছে। বিষয়টা এখন এমন–আগে এক ধর্ম পালন করতেন, কিছুদিন পরে অন্য ধর্ম গ্রহণ করে আগের ধর্ম এবং ধর্মের মানুষের উপর অত্যাচার চালাচ্ছেন। বিষয়টা এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে মানুষ হবেন কবে! পালিয়ে হয়তো জান বাঁচবে, কিন্তু ভিতরটা মরে যাবে। আবার যে ধর্ম নিয়ে এখন বড়াই করছেন, ইতিহাসের শিক্ষা–আরেক ধর্মের বর্বরতা এসে ওই বড়াই করা ধুলোয় মিশিয়ে দেবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এভাবে চলুক–তাই কি চান? নাকি ‘মানুষ’ হবেন?
‘মানুষ’ হওয়া যায় না, তবে হওয়ার চেষ্টা চালানো যায়। ইতিহাস বলে–এক ধর্ম দিয়ে আরেক ধর্মের অসভ্যতা-বর্বরতা রোধ করা যায় নি, যায় না, যাবেও না। ওই অসভ্যতা-বর্বরতাকে প্রতিরোধ করতে হলে মানুষ হওয়ার পথে চলতে হবেে… নিজে পারেন নি, কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধর্মের শিক্ষা না দিয়ে মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিলে একসময় ধর্মের বর্বরতা কমে আসবে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ কমে আসবে… কাউকে আর দেশত্যাগ করে বেড়াতে হবে না, পালিয়ে বেড়াতে হবে না, একটু ভালো থাকার জন্য ‘উন্নত’ দেশে পাড়ি জমাতে হবে না–মানুষ হলে মানুষেরা নিজের দেশে ‘উন্নতি’ করে, সবাইকে নিয়ে ‘উন্নত’ জীবনযাপন করে।
[প্রথাগত, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলোকে ছুঁড়ে ফেলাটাই ‘মানুষ’ হওয়ার পথে সর্বপ্রথম পদক্ষেপ…]
Category: পাল্লাব্লগTag: দর্শন
Previous Post:তালিকা
Next Post:নাস্তিক হবার অনুভূতি

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পাল্লাহু । pAllahu • ফেসবুক • পেজ • টুইটার

Return to top