লিখেছেন : কবিতা রায়
বুদ্ধকে অবতার বানিয়ে মাথায় তোলার জন্য অবিরাম মিথ্যা প্রচার চালানো হয়ে থাকে। বাস্তবে আর সব অহিংসাবাদীদের মতোই বুদ্ধও ছিলেন আপোষকামী একজন ধর্মগুরু, যাকে পরের পয়সায় খেয়ে বাঁচতে হত। সামাজিক বিভেদের বিরুদ্ধে বুদ্ধ কোনোরকম লড়াই কখনোই করেননি, বরং তাঁর তথাকথিত দুঃখ দূরীকরণের ধর্মটাও সকলে গ্রহণ করতে পারত না। বউদের দীক্ষা নিতে স্বামীর অনুমতি লাগত। ঋণগ্রস্তদের দীক্ষা নিতে গেলে মহাজনের কাছে অনুমতি নিতে হত। দাসদের দীক্ষা নেবার আগে মালিকের কাছে অনুমতি চাইতে হত। এসব অনুমতি ছাড়া বুদ্ধদেব দীক্ষা দিতেন না।
মহারাজ বিম্বিসার বুদ্ধের পরম ভক্ত ছিলেন। রাজা এত ভক্তি করেন দেখে প্রথমে রাজার কর্মচারীরা বুদ্ধের পায়ে পড়তে লাগল। তারপর দেখা গেল রাজার সৈন্যরাও গিয়ে বুদ্ধের কাছে দীক্ষা নিচ্ছে। দেখে রাজা তো ক্ষেপে লাল। সৈন্যরা অহিংস হয়ে গেলে রাজত্ব চলবে কিসের জোরে? বিম্বিসার ফরমান দিলেন যে রাজার অনুমতি ছাড়া কোনো রাজকর্মচারীকে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা দিলে সেই বৌদ্ধ গুরুর গর্দান নেওয়া হবে। রাজা ক্ষেপেছে দেখে বুদ্ধকে সমাধান বের করতেই হল। তিনি বললেন রাজসৈনিকদের প্রব্রজ্যা অনুচিত।
পরিষ্কার বোঝা যায় যে বুদ্ধের প্রধান সমর্থক ছিল সুদখোর মহাজন, দাস ব্যবসায়ী মালিক আর গর্দান নেওয়া রাজশক্তি। এরা নিজেরা কেউই বুদ্ধের করুণাময় বাণীতে আস্থা রাখত না, শুধু তাদের অত্যাচারে যাতে ঋণগ্রস্ত, দাস বা প্রজারা বিদ্রোহ না করে তার জন্য অহিংসা প্রচার করতে বুদ্ধের পিছনে কোটি কোটি স্বর্ণমুদ্রা খরচ করত। এদেরই জীবনের দুঃখ দূর করতে বুদ্ধ তাঁর ধর্মদীক্ষা দিতেন। এই ক্ষত্রিয় রাজশক্তি এবং বেনিয়া বৈশ্যরা ব্রাহ্মণদের প্রভাব কমিয়ে নিজেরা মোড়ল হবার জন্য বুদ্ধকে ব্যবহার করত। সেইসাথে প্রজাদের বিদ্রোহের ভয়টাও দূর করত। এখনও ঠিক এই শ্রেণীর লোকেরাই একই উদ্দেশ্যে বুদ্ধকে আকাশে তুলে রাখে। অকর্মণ্য সরকার আর মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরাই বুদ্ধের প্রধাণ প্রচারক।
বিম্বিসারের পর অজাতশত্রু মগধের সিংহাসনে বসেই বুদ্ধকে দেশত্যাগ করার হুকুম দেয়। বুদ্ধ কোনোরকম প্রতিবাদ না করে এবং কোনো অলৌকিক শক্তি না দেখিয়ে চুপচাপ সরে পড়েন এবং কুশীনগরে গিয়ে বাকি জীবনটা কাটান। খোলা তলোয়ারের সামনে থেকে সমস্ত অহিংস অবতারই এভাবেই পালায়। তরুণ বয়সে বহু যুদ্ধবিগ্রহ করার পর একটু বয়সটা পাকলে অজাতশত্রু এই বুদ্ধকে কাজে লাগানোর চিন্তা শুরু করেন। যেমনটা পাকাবয়সে বিম্বিসার করেছিলেন।
Leave a Reply