লিখেছেন : কবিতা রায়
মাংসভোজী প্রাণীদের মধ্যে লড়াই করার মানসিকতা বেশি থাকে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে মানুষও ঠেসে মাংস খেলেই এসব গুণ অর্জন করতে পারবে।
শক্তি, সাহস, বুদ্ধি, চতুরতা সহ মাংসভোজী প্রাণিদের গুণগুলো সবই তাদের দেহে বিভিন্ন হরমোন আর এনজাইমের সমষ্টির ফলাফল। এই গুণগুলো জঙ্গলের তৃণভোজীদের মধ্যেও কিছু পরিমাণে থাকে। পালিয়ে বাঁচার এবং লুকিয়ে বাঁচার প্রয়োজনেই থাকে।
যখন কোনো প্রাণীকে শিকার করা হয় তখন বাঁচার চেষ্টায় তাদের দেহে এইসব হরমোন আর এনজাইমের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যায়। এরপর শিকারী যখন সেই শিকারের মাংস খায় তখন সেইসব রাসায়নিক পদার্থগুলো শিকারীর দেখেও কিছুটা চলে আসে। যার ফলে জঙ্গলের শিকারীদের মধ্যে এইসব গুণের পরিমাণ বেশি থাকে। শিকারকে ধরে বধ করার সময়ে শিকারীর দেহেও এসব রাসায়নিকের পরিমাণ বাড়ে। আবার লম্বা সময়ের জন্য শিকারের অভ্যাস না থাকলে এসব গুণ অনেকটাই কমে যায় কারণ তখন শুধুমাত্র নিজের দেহে তৈরি হওয়া হরমোন আর এনজাইমের উপরেই নির্ভর করতে হয়।
ফার্মের পোল্ট্রি মুরগি কিম্বা ছাগল-ভেড়াদের দেহে এসব হরমোনের পরিমাণ এমনিতেই খুব কম, কারণ তারা বিপদজনক পরিস্থিতিতে বসবাস করেনা। তাছাড়া মানুষকে তারা বিপদজনক শিকারী বলে মনেও করেনা। পোল্ট্রি মুরগিদের চোখের সামনে একটা করে কেটে বিক্রি হতে থাকলেও বাকিদের মনে কোনোরকম বিপদের আশঙ্কা জাগেনা ফলে বিপদ মোকাবিলা করার মতো রাসায়নিক তাদের দেহে বেশি তৈরিও হয়না। ফলে এদের মাংস খেয়ে শিকারী প্রাণিদের গুণ অর্জন করা আদৌ সম্ভব নয়। তার উপর পোল্ট্রি খাওয়া জনগণ নিজেরা মাংস কাটতেও চায় না।
কিছু শিকারী প্রাণী এই ব্যাপারটা ভালই বোঝে। তারা শিকারকে হঠাত বধ না করে অনেক সময় নিয়ে মারে। যাতে শিকারের দেহে এইসব হরমোন আর এনজাইমের পরিমাণ খুব বেশি বাড়তে পারে। শিকারকে যথেষ্ট ভয় দেখিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে মারতে পারলে ব্যাপারটা বেশি লাভজনক হয়। বিড়ালদের মধ্যে এই স্বভাবের কথা প্রায় সকলেই জানে। জলে চুবিয়ে, ঢাকঢোল বাজিয়ে ভয়ানক একটা মূর্তির সামনে বলি দেওয়া পাঁঠার মাংসের সাথে তাই কশাইখানা থেকে কাটিয়ে আনা পাঁঠার মাংসের যথেষ্ট তফাত আছে। বলির মহাপ্রসাদ খেলে তেজ বৃদ্ধি পায় বলে যে ধর্মীয় বিশ্বাস আছে সেটা একেবারে ভুল নয়।
তবে জঙ্গল থেকে শিকার করা মাংসের কাছে বাকি সব ফেল।
Leave a Reply