লিখেছেন : কবিতা রায়
গন্ধটা খুব সন্দেহজনক। আমার এই পাপী নাকে তো সেরকমই লাগে।
জনাব সোরাবর্দী হোসেনের এবং মুসলিম লীগের ইচ্ছা ছিল পুরো বাংলাকে পাকিস্তানে দেওয়া। এদিকে সেকুলারদের ইচ্ছা ছিল পুরো বাংলাকে একটা স্বাধীন সেকুলার দেশ হিসাবে আদায় করা। উল্লেখ্য যে সে সময়ে ভারতকে সেকুলার দেশ হিসাবে গড়ে তোলার কোনো কথা ওঠেনি, সবাই ওটাকে হিন্দুস্তানই ভাবত। বাঙালি সেকুলারদের ইচ্ছা ছিল হিন্দুস্তান কিম্বা পাকিস্তান থেকে মুক্ত সেকুলার বাংলা নামের আলাদা দেশ। কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল না, বাংলাকে হিন্দুস্তান কিম্বা পাকিস্তানে যোগ দিতেই হত। তাই অবশেষে ভাগাভাগি করে কিছুটা হিন্দুস্তানে আর কিছুটা পাকিস্তানে গেল।
এই ভাগাভাগির সময়ে বিরাট বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন আম্বেদকরপন্থী দলিত নেতা যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল। উনি ওনার সিড্যুল অনুসারীদের নিয়ে পাকিস্তানে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত নেন। যোগেন মন্ডল মনে করতেন হিন্দুস্তানে উচ্চবর্ণের সাথে দলিতদের একতা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, বরং পাকিস্তানে গিয়ে দলিত-মুস্লিম একতা সম্ভব। তাই পাকিস্তান একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হবে জেনেও তিনি পাকিস্তানেই যোগ দিলেন। কারণ পাকিস্তানে ওনার জাতভাই দলিতদের কোটা দেবার লোভ দেখানো হয়েছিল। সেই লোভে পড়ে যোগেন মন্ডল ভাইভাই তত্ব প্রচার করেছিলেন। পাকিস্তান থেকে উচ্চবর্ণদের মেরেধরে তাড়ানোয় পুরো সহযোগীতা করেছিলেন।
এই উদবাস্তুদের কারণে ভবিষ্যতে পশ্চিমবাংলাকে দখল করার ব্যাপারে এক বিরাট সমস্যা দেখা দেয়। যখন এগুলো চলছিল তখন সোরাবর্দী হোসেন গান্ধীর ছত্রছায়ায় কলকাতাতেই বাস করছিলেন। তিনি দেখলেন বিতাড়িত হিন্দুরা যদি পশ্চিমবাংলায় স্থায়ী হতে থাকে তবে কোনোভাবেই আর তারা পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে চাইবে না। বিশেষ করে গান্ধীকে খুন হতে দেখে তিনি বুঝেছিলেন যে হিন্দুস্তানে অসহিষ্ণুতা খুবই বাড়তে চলেছে, সেই বিপদ থেকে বাঁচাবার জন্য গান্ধীও আর নেই। এর একমাত্র সমাধান যে পশ্চিমবাংলায় পাকিস্তানপন্থীদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। অর্থাৎ মুসলিম লীগের সমর্থক এবং যোগেন মন্ডলের সমর্থক বাড়াতে হবে। তবেই পশ্চিমবাংলাকে একদিন পূর্ব পাকিস্তানে তথা বাংলাদেশে যুক্ত করা যাবে।
অতএব ১৯৪৯ সালে সোরাবর্দী হোসেন কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে মুজিবুর রহমান, মাওলানা ভাসানী ইত্যাদিদের নিয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ দলটি তৈরি করলেন। তারপরেই দেখা গেল পরের বছরই যোগেন মন্ডল পাকিস্তান ছেড়ে রিফিউজি সেজে পশ্চিমবাংলায় চলে এসেছেন। যোগেন মন্ডলের সমর্থকরা যারা পাকিস্তানকে ভোট দিচ্ছিল তারাও দলেদলে রিফিউজি হয়ে পশ্চিমবাংলায় ঢুকতে আরম্ভ করেছে। কিন্তু পালিয়ে আসার পর তারা মোটেও ইসলাম বা মুসলিমদের দোষ দিচ্ছেনা। যোগেন মন্ডল কখনোই বলছেন না যে দলিত-মুসলিম একতা সম্ভব নয়। বরং তিনি সব দোষ পাকিস্তান সরকারের ভুলের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন এবং পাকিস্তানে হয়নি বলে ভারতেই সেই দলিত-মুসলিম একতা নিয়ে নতুন করে কাজ আরম্ভ করেছেন।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পর পশ্চিমবাংলা থেকে কংগ্রেসের মুছে যাওয়া কি শুধুই মুসলিম ভোটের ফল? কোনো অবস্থাতেই পশ্চিমবাংলায় বিজেপিকে ঢুকতে না দেবার লড়াই কি কেবল ২৮% মুসলিম ভোটারেরই লড়াই? দলিত-মুসলিম একতার অবদান কি একেবারেই নেই?
Leave a Reply