লিখেছেন : কবিতা রায়
নিরামিষ খাদ্য ওরফে কার্বোহাইড্রেট আসলে এক ধরণের নেশা। মদ-গাঁজার মতো এটাও মানবদেহে ডপামিনের পরিমাণ বাড়িয়ে এক ধরনের “এই বেশ ভালো আছি” জাতীয় মানষিক আনন্দ এবং শান্তির সৃষ্টি করে। এর দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারের ফলে এক ধরণের মানষিক রোগের সৃষ্টি হয়। এই রোগে আক্রান্তরা বাইরের জগতে যাইই হোক না কেন, তাতে কোনো সমস্যা দেখতে পায়না। খুবই ভয়ানক পরিস্থিতিতে পড়লে সাময়িকভাবে হয়ত একটু দুশ্চিন্তা করে, কিন্তু সেসব সমস্যা নিয়ে লম্বা সময়ের জন্য গা-মাথা ঘামিয়ে সমাধান করার ইচ্ছা তাদের থাকেনা। অতি সহজেই সেগুলো ভুলে যায়। ভুলে যাবার উপায় না থাকলে কোনো এক অবাস্তব ঠাকুর-দেবতা সেগুলোর সমাধান করে দেবে ধরে নিয়ে দিব্বি আনন্দে থাকে। রোগটা চুড়ান্ত পর্যায়ে চলে যাবার পর এমনকি ঘরে আগুন লাগতে দেখলেও তাদের মনে অপার আনন্দ জেগে ওঠে। এই পাগলামিকে অনেকে সিদ্ধিলাভের চিহ্ন বলে মনে করলেও আদতে এগুলোর উৎস হল মগজের স্নায়ুকোষে পুষ্টির অভাব এবং হরমোনের ভারসাম্যের সমস্যা। মগজের দুর্বল স্নায়ু নানারকম ভ্রান্ত দৃশ্য দেখায় আর অজ্ঞ লোকে সেগুলোকে দিব্যজ্ঞান বলে মনে করে। অ্যানিম্যাল প্রোটিন এই সমস্যার সমাধান সহজেই করতে পারে, কিন্তু যারা পাগলকে জিনিয়াস ভেবে বসে থাকে তাদের পক্ষে এটা স্বীকার করা সহজ নয়।
এই ভ্রান্তদর্শনের একটা অতি সাধারণ উদাহরণ হল ভূত দেখা। আজ থেকে ৫০ বছর আগেও লোকে বনেবাদাড়ে-অলিগলিতে ভূত দেখত। যার আসল কারণ ছিল আয়োডিনের অভাব। বাজারে আয়োডিন লবণ আসার পর এইসব ঘটনা প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। যদিও অন্যান্য পুষ্টির অভাবে কিছু লোকে এখনও দেখতে পায়।
ভারতের ভন্ড গুরুরা এই সুযোগটা ভালভাবেই কাজে লাগিয়েছে। তাদের কারোই তথাকথিত সিদ্ধি ছিলনা এবং অন্যকে সেই পথ দেখানোর যোগ্যতাও ছিলনা। তার পরিবর্তে নিরামিষ খাদ্যের নেশা ধরিয়ে একই রকম একটা মানষিক অবস্থা তৈরি করা অনেক সহজ এবং সেটা পাইকারী হারে বহু মানুষের উপর চালানো যায়। কিন্তু বাস্তবে যে এই গুরুদের কোনোরকম অলৌকিক ক্ষমতা ছিলনা সেটা বিপদের দিনে বোঝা গেছে। অলৌকিক ক্ষমতা দূরে থাকুক, সাধারণ জ্ঞানেও তাদের ভবিষ্যৎ বুঝবার ক্ষমতা ছিলনা। সকলেই বিপদের সময়ে অকর্মা হয়ে থেকেছে।
রামায়ণ-মহাভারতের যুগের সাধারণ মানুষ থেকে ব্রহ্মজ্ঞানী ঋষি অবধি কেউ নিরামিষ আহার কিম্বা ব্রহ্মচর্য্য পালন করত না। বর্তমানে হিন্দুদের যেসব গোত্রনাম আছে সেগুলো সবই ঋষিদের নামে। এতেই যথেষ্ট প্রমাণ হয় যে ঋষিরা ব্রহ্মচারী হয়ে নিজেদের বংশলোপ করে যায়নি। মাংস যে কী পরিমাণে গিলত সেটার বিবরণও প্রচুর আছে। বস্তুত অসুস্থ মগজের ভ্রান্তদর্শণ আর প্রকৃত সিদ্ধির মধ্যে তফাত রাখতে চাইলে অ্যানিম্যাল প্রোটিন উপযুক্ত পরিমাণে গ্রহণ করাটাই একমাত্র পথ।
Leave a Reply