লিখেছেন গোলাপ
“যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।”
হুদাইবিয়া সন্ধিচুক্তি সম্পন্ন করার ঠিক এক বছর পর ৬২৯ সালের মার্চ মাসে স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যে ওমরা পালন করেছিলেন, সেই ওমরা পালন শেষে মদিনায় প্রত্যাবর্তন কালে তিনি কার অভিপ্রায়ে ও কীভাবে আবারও হুদাইবিয়া সন্ধিচুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছিলেন, তার আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে। এর আগের বছর হুদাইবিয়া সন্ধি বর্ষে মুহাম্মদের যে-অনুসারীরা তাঁর সঙ্গে মক্কা যাত্রায় অংশগ্রহণ করে তাঁর “স্বপ্ন-দর্শন”ঘোষণার সম্পূর্ণ বিপরীত পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন ও অত্যন্ত অবমাননাকর শর্তে কুরাইশদের সাথে মুহাম্মদের সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করে হতাশা ও মর্মবেদনাগ্রস্ত হয়েছিলেন, এই ওমরা পালনে মুহাম্মদ “শুধু” তাঁর সেই অনুসারীদেরই সঙ্গে এনেছিলেন। ওহুদ যুদ্ধের চরম পরাজয়ের পর যে-উদ্দেশ্য সাধনের প্রয়োজনে মুহাম্মদ ‘শুধু তাঁর ওহুদ যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী’ অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে ঐ যুদ্ধের পরদিন হামরা আল-আসাদ অভিযান পরিচালনা করেছিলেন (পর্ব: ৬৮), সেই একই উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে হুদাইবিয়া সন্ধিচুক্তির এক বছর পর এই ওমরা পালনে তিনি “শুধু” তাঁর হুদাইবিয়া অনুসারীদেরই সঙ্গে এনেছিলেন।
অনুসারীদের হতাশাগ্রস্ত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ, তাঁদের মনোবল চাঙ্গা করা ও নিজের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার ও নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে মুহাম্মদ সচরাচর যে-দুটি কৌশল (পর্ব: ১২২) অবলম্বন করতেন, হুদাইবিয়া সন্ধিচুক্তি শেষে মদিনায় প্রত্যাবর্তন কালে পথিমধ্যেই তিনি তাঁর প্রথম কৌশলটি প্রয়োগ করেন (পর্ব: ১২৩); মদিনায় ফিরে আসার দেড়-দুই মাস পর ‘খায়বার’-এর নিরীহ জনপদবাসীর ওপর আগ্রাসী ও নৃশংস হামলাটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় কৌশল (পর্ব: ১২৪); সে কারণেই তিনি ‘খায়বার হামলা’ কালে শুধু তাঁর হুদাইবিয়ায় অংশগ্রহণকারী অনুসারীদেরই সঙ্গে নিয়েছিলেন।
‘খায়বার’ হামলাটি সংঘটিত হয়েছিল হিজরি ৭ সালের মহরম মাসের শেষার্ধে (মে-জুন, ৬২৮ সাল); মুহাম্মদের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা খায়বারের বিভিন্ন দুর্গ একে একে দখল করে নেন ও তাঁদের অধিবাসীদের অবরোধ করে রাখেন সুদীর্ঘ ১৩-১৯ রাত্রি পর্যন্ত। পরিশেষে তাঁদের সম্পূর্ণ বিজয় অর্জিত হয় হিজরি ৭ সালের সফর মাসে (যার শুরু হয়েছিল জুন ১০, ৬২৮ সাল); এই সময়টিতে মুহাম্মদ হুদাইবিয়া সন্ধিচুক্তির যে-শর্তটি লঙ্ঘন করেছিলেন তা ছিল নিম্নরূপ।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮) বর্ণনা: [1] [2] [3]
(আল-তাবারী ও আল-ওয়াকিদির বর্ণনা, ইবনে ইশাকের বর্ণনারই অনুরূপ)
‘যখন খায়বার বিজয় সম্পন্ন হয়, আল-বাহয গোত্রের আল-হাজ্জাজ বিন ইলাত আল-সুলামি আল্লাহর নবীকে বলে, “আমার পত্নী উম্মে শেয়েবা বিনতে আবু তালহার কাছে আমার টাকাপয়সা আছে” – যখন তারা একত্রে বসবাস করতো, তখন তার গর্ভে তার যে-সন্তানের জন্ম হয়, তার নাম ছিল মুরিদ – “টাকাপয়সাগুলো আছে মক্কার ব্যবসায়ীদের কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, সুতরাং আমাকে অনুমতি দিন, যেন আমি সেখানে গিয়ে টাকাপয়সাগুলো আনতে পারি।”
তাঁর অনুমতি পাওয়ার পর সে বলে, “হে আল্লাহর নবী, আমাকে অবশ্যই মিথ্যা কথা বলতে হবে।” তিনি বলেন, “তাদেরকে তাই বলো।”
আল-হাজ্জাজ বলেছে, “আমি যখন মক্কায় আসি, দেখি যে, আল-বেইদা গিরিপথের (মক্কার আল-তানিম গিরিপথ) স্থানটিতে কিছু কুরাইশ খবর সংগ্রহের চেষ্টা করছে ও আল্লাহর নবীর কী অবস্থা, তা জানতে চাচ্ছে; কারণ তারা শুনেছে যে, আল্লাহর নবী ‘খায়বার’ গিয়েছে। তারা জানতো যে উর্বরতা, সুরক্ষা ও জনসংখ্যার বিচারে ঐ স্থানটি হিজায-এর প্রথম স্থানীয় একটি শহর, তাই তারা সেখান দিয়ে অতিবাহিত হওয়া আরোহীদের জিজ্ঞাসা করে খবর সংগ্রহের চেষ্টা করছে। আমি যে মুসলমান, তা তারা জানতো না, তাই তারা যখন আমাকে দেখে বলে, “এ হলো আল-হাজ্জাজ বিন ইলাত। তার কাছে অবশ্যই খবর আছে। হে আবু মুহাম্মদ আমাদেরকে বলো, আমরা শুনেছি যে, ঐ বাটপাড়টা (highwayman) খায়বার গিয়েছে, যেটি ইহুদিদের একটি শহর ও হিজায এর একটি বাগান।” [4]
আমি বলি, ‘আমি তা শুনেছি ও আমার কাছে যে-খবর আছে, তা তোমাদের খুশি করবে।” তারা আগ্রহ নিয়ে আমার উটটির উভয় পাশে এগিয়ে আসে ও বলে, “সেটা কী, হাজ্জাজ।”
আমি বলি, “সে এমনভাবে পরাজিত হয়েছে যে, রকম তোমরা কখনোই শোনোনি; আর তার অনুসারীদের হত্যা করা হয়েছে, এমন অবস্থা, যা তোমরা কখনোই শোনোনি; আর মুহাম্মদ হয়েছে বন্দী। খায়বারের লোকেরা বলেছে, ‘আমরা তাকে হত্যা করবো না, পরিবর্তে আমরা তাকে মক্কার জনগণের কাছে পাঠাবো, যেন তার তাদের লোকদের হত্যা করার প্রতিশোধ স্পৃহায় ওরা নিজেরাই তাকে হত্যা করে।”
তারা উঠে যায় ও চিৎকার করে মক্কার লোকদের বলে, “তোমাদের জন্য এক খবর আছে! তোমাদের শুধু মুহাম্মদকে তোমাদের কাছে পাঠানোর অপেক্ষায় থাকতে হবে, যাতে তোমাদের মধ্যে কেউ তাকে হত্যা করে।”
আমি বলি, “মক্কায় আমার টাকাপয়সা সংগ্রহের ব্যাপারে ও আমার কাছে যারা ঋণী, তাদের কাছ থেকে টাকাপয়সা সংগ্রহের ব্যাপারে তোমরা আমাকে সাহায্য করো, কারণ আমি খায়বার যেতে চাই ও অন্য বণিকদের সেখানে পৌঁছার আগেই মুহাম্মদ ও তার পলাতক অনুসারীদের লুটের মাল আমি কব্জা করতে চাই ।” [5]
তারা উঠে যায় ও এত দ্রুততায় আমার টাকাপয়সা গুলো সংগ্রহ করে দেয়, যা আমি কল্পনাও করিনি যে, তা আমার দ্বারা কখনো সম্ভব হতে পারতো। আমি আমার স্ত্রীর কাছে যাই ও তার কাছে যে নগদ টাকাপয়সাগুলো মজুদ আছে সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি, তাকে বলি যে, সম্ভবত আমার খায়বার যাওয়া উচি,ত যাতে অন্য বণিকদের সেখানে পৌঁছার আগেই আমি কেনাকাটার সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারি।
যখন আব্বাস এই খবরটি শুনতে পায় ও আমার সম্পর্কে জানতে পারে, সে আমার পাশে এসে দাঁড়ায় ও যে-খবরটি আমি নিয়ে এসেছি, সে সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে; সে সময় আমি এক বণিকের তাঁবুর ভিতরে ছিলাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে চাই যে, যদি আমি বিশ্বাস করে তাকে এক গোপন সংবাদ জানাই, তবে সে তা গোপন রাখতে পারবে কি না। সে বলে যে, সে তা পারবে। তখন আমি বলি, “তাহলে অপেক্ষা করো যে পর্যন্ত না আমি তোমার সাথে গোপনে মিলিত হতে পারি, কারণ তুমি তো দেখতেই পাচ্ছ যে, আমি এখন আমার টাকাপয়সা সংগ্রহ করছি; সুতরাং কাজটি শেষ হওয়া পর্যন্ত তুমি আমার কাছ থেকে যাও (তাবারী: ‘এবং সে আমাকে রেখে চলে যায়’)।”
অতঃপর, যখন আমি মক্কায় আমার যা কিছু আছে, তার সবকিছুই সংগ্রহ করি ও ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিই, আমি আব্বাসের সাথে মিলিত হই ও তাকে বলি, “আমি যে-খবরটি তোমাকে বলবো, তা তিন রাত্রি পর্যন্ত গোপন রাখবে, তারপর তোমার যা ইচ্ছা হয়, তাই বলবে; কারণ আমার আশংকা এই যে, আমার পেছনে ধাওয়া করা হতে পারে।” যখন সে বলে যে, সে তা-ই করবে, আমি বলি, “আমি যখন আসি তখন তোমার ভাতিজা তাদের রাজার কন্যাকে (অর্থাৎ সাফিয়া) বিবাহ করার অপেক্ষায় ছিল [পর্ব:১২৪]; খায়বার বিজয় হয়েছে ও তার ভিতরে যা কিছু ছিল, তা নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেগুলো এখন মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে।”
সে বলে, “এ কী বলছো, হাজ্জাজ?” আমি বলি, “হ্যাঁ, আল্লাহর কসম, কিন্তু আমার এই গোপন সংবাদটি তুমি গোপন রেখো। আমি মুসলমান হয়েছি ও শুধু আমার টাকাপয়সা গুলো নিতে এসেছি, আশংকা করছিলাম যে, আমি হয়তো এ থেকে বঞ্চিত হবো। তিন রাত অতিবাহিত হবার পর তোমার যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবেই এই খবরটি প্রকাশ করতে পারো।”
যখন তৃতীয় দিনটি আসে, আব্বাস তার লম্বা ঢিলেঢালা পোশাক পরে ও নিজেকে সুবাসিত করে তার লাঠিটি নিয়ে কাবা ঘরে যায় ও তা প্রদক্ষিণ করে। যখন লোকেরা তাকে দেখে, তারা বলে, “হে আবুল ফজল, ভীষণ দুর্ভাগ্যের সময় এটিই হলো প্রকৃত দৃঢ়তা!”
সে জবাবে বলে, “কক্ষনোই না, যার নামে তোমরা শপথ করো, সেই আল্লাহর কসম, মুহাম্মদ খায়বার জয় করেছে ও তাদের রাজার কন্যাকে বিবাহ করার অপেক্ষায় আছে। তাদের যা কিছু ছিল, তার সবকিছুই সে জব্দ করেছে ও এখন তা তার ও তার অনুসারীদের সম্পত্তি।” তারা জিজ্ঞাসা করে, “তোমার এই এই সংবাদটি কে এনেছে?” সে বলে, “লোকটি হলো সেই, যে তোমাদের সংবাদটি এনেছে। সে মুসলমান হিসাবে তোমাদের কাছে এসেছিল ও তার টাকাপয়সা নিয়ে সে মুহাম্মদ ও তার অনুসারীদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য চলে গিয়েছে, সে তার সাথেই থাকবে।”
তারা বলে, “হায় আল্লাহ, আল্লাহর শত্রু পালিয়ে গেছে। যদি আমরা তা জানতাম, তবে তার ব্যবস্থা আমরা করতাম।” প্রায় একই সাথে সঠিক সংবাদটি তাদের কাছে এসে পৌঁছে।’
– অনুবাদ, টাইটেল, ও [**] যোগ – লেখক।
>>> মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, আল-তাবারী ও আল-ওয়াকিদির ওপরে বর্ণিত প্রাণবন্ত (Vivid) বর্ণনায় যে-বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো – হুদাইবিয়া সন্ধিচুক্তি সম্পন্ন করার মাত্র দুই-আড়াই মাস পর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর আল-হাজ্জাজ ইবনে ইলাত আল-সুলামি নামের এক অনুসারীকে কুরাইশদের সঙ্গে প্রতারণার অনুমতি দিয়েছিলেন, “যেটি ছিল হুদাইবিয়া সন্ধিচুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন! কারণ হুদাইবিয়া সন্ধির একটি শর্ত ছিল এই যে, ‘তারা একে অপরের প্রতি কোনোরূপ গোপন অভিসন্ধি বা প্রতারণার আশ্রয় নেবেন না (পর্ব: ১২৫)!’”
জগতের প্রায় সকল তথাকথিত মডারেট (ইসলামে কোনো কোমল-মোডারেট বা উগ্র শ্রেণীবিভাগ নেই) সাধারণ মুসলমানদের দৃঢ় বিশ্বাস এই যে, “মুহাম্মদ ছিলেন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ।” নিজ উদ্দেশ্য সাধনের প্রয়োজনে মুহাম্মদ যে কখনো প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারেন, কিংবা তিনি তাঁর অনুসারীদের কখনো প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার অনুমোদন দিতে পারেন, তা তাঁরা কল্পনাও করতে পারেন না। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের প্রয়োজনে, কিংবা কোনো অমুসলিম রাজ্যে মুসলমান পরিচয় প্রকাশে নিপীড়ন অথবা মৃত্যুঝুঁকির আশংকাথাকলে, কিংবা কোনো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে একজন মুসলমান মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারেন – ইসলামী পরিভাষায় যার নাম হলো ‘তাকিয়া (Taqyya)‘;এই তথ্যটি হয়তো তাঁদের অনেকেই কম-বেশি অবগত আছেন। কিন্তু তাঁদের অধিকাংশই কল্পনাও করতে পারেন না যে, অবিশ্বাসীদের সঙ্গে মিথ্যা ও প্রতারণা করার অনুমতি শুধুমাত্র ঐ সকল কারণগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম স্কলারদেরই ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, পার্থিব উদ্দেশ্য সাধনের প্রয়োজনে একজন মুসলমান অবলীলায় অবিশ্বাসীদের সঙ্গে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারেন। আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় যা অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো – মুহাম্মদ নিজেই তাঁর এক অনুসারীকে এমনটি করার অনুমতি দিয়েছিলেন, আর সেটা তিনি করেছিলেন ঐ লোকদের সঙ্গে, যাদের সঙ্গে তিনি তা করবেন না মর্মে মাত্র দুই-আড়াই মাস পূর্বে এক লিখিত সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। [6]
উদ্দেশ্য সাধানের প্রয়োজনে মুহাম্মদ “তাঁর অনুসারীদের”কীভাবে প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার অনুমতি ও আদেশ দিতেন, তার বিস্তারিত আলোচনা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। আমরা জেনেছি কীভাবে মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের প্রতারণার আশ্রয়ে ক্বাব বিন আল-আশরাফ কে খুন করার আদেশ জারী করেছিলেন (পর্ব ৪৮);আমরা জেনেছি প্রতারণার আশ্রয়ে মুহাম্মদ অনুসারীরা কীভাবে আবু রাফিকে খুন করেছিলেন (পর্ব ৫০); আমরা জেনেছি খন্দক যুদ্ধে মুহাম্মদ কীভাবে নুইয়াম বিন মাসুদ বিন আমির নামের এক অনুসারীকে প্রতারণার আশ্রয়ে কুরাইশ, ঘাতাফান ও বনি কুরাইজা গোত্রের লোকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষ্যে নিয়োগ করেছিলেন (পর্ব ৮৫)।
মুহাম্মদ শুধু যে তাঁর অনুসারীদেরই প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার অনুমতি ও আদেশ দিতেন, তাইই নয়, নিজ উদ্দেশ্য সাধনের প্রয়োজনে “মুহাম্মদ নিজে”কীভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিতেন, তার বিস্তারিত আলোচনাও ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। আমরা জেনেছি বনি নাদির গোত্রকে উচ্ছেদ ও তাদের সম্পত্তি লুট করার অভিপ্রায়ে মুহাম্মদ কীভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন (পর্ব ৫২); আমরা জেনেছি খন্দক যুদ্ধে কীভাবে তিনি ঘাতাফান গোত্রের দলপতি ইউয়েনা বিন হিসন-কে উৎকোচ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন (পর্ব: ৮১); আমরা জেনেছি খন্দক যুদ্ধ শেষে তিনি কীভাবে প্রতারণার আশ্রয়ে বনি কুরাইজা গোত্রের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিলেন (পর্ব ৮৭)।
মুহাম্মদের স্বরচিত কুরান ও আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই রচিত সিরাত ও হাদিসের আলোকে ‘হুদাইবিয়ার সন্ধি’ উপাখ্যানের বিস্তারিত আলোচনায় মুহাম্মদের চরিত্রের এই বিশেষ দিকটি আবারও অত্যন্ত স্পষ্ট।
ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইসলামের ইতিহাসের এ সকল অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে গোপন ও বিকৃত করে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের প্রাসঙ্গিক অংশটিও সংযুক্ত করছি।
The narrative of Muhammad Ibne Ishaq: [1] [2] [3]
When Kaybar had been conquered al-Hajjaj b. ‘Ilat al-Sulami of the clan al-Bahz said to the apostle, ‘I have money with my wife Umm Shayba d. Abu Talha-when they had livedtogether he had a son called Mu’rid by her – and money scattered among the Meccan merchants, so give me permission to go and get it.’ Having got his permission he said, ‘I must tell lies, O apostle.’ He said, ‘Tell them.’
Al-Hajjaj said, ‘When I came to Mecca I found in the pass of al-Bayda’ (The pass of al-Tan’im in Mecca.) some men of Quraysh trying to get news and asking how the apostle fared because they had heard that he had gone to Khaybar. They knew that it was the principal town of the Hijaz in fertility, fortifications, and population, and they were searching for news and interrogating passing riders. They did not know that I was a Muslim and when they saw me they said, “It is al-Hajjaj b. ‘Ilat. He is sure to have news. Tell us, O Abu Muhammad, for we have heard that the highwayman has gone to Khaybar which is the town of the Jews and the garden of the Hijaz.” I said, “I have heard that and I have some news that will please you.” They came up eagerly on either side of my camel, saying, “Out with it, Hajjaj!” I said, “He has suffered a defeat such as you have never heard of and his companions have been slaughtered; you have never heard the like, and Muhammad has been captured.” The men of Khaybar said, “We will not kill him until we send him to the Meccans and let them kill him among themselves in revenge for their men whom he has killed.“They got up and shoulted in Mecca, “Here’s news for your! You have only to wait for this fellow Muhammad to be sent to you to be killed in your midst.” I said, “Help me to collect my money in Mecca and to get in the money owed to me, for I want to go to Khaybar to get hold of the fugitives from Muhammad and his companions before the merchants get there.” They got up and collected my money for me quicker than I could have supposed possible. I went to my wife and asked her for the money which she had by her, telling her that I should probably go to Khaybar and seize the opportunity to buy before the merchants got there first.
When ‘Abbas heard the news and heard about me he came and stood at my side as I was in one of the merchants’ tents, asking about the news which I had brought. I asked him if he could keep a secret if I entrusted it to him. He said he could, and I said, “Then wait until I can meet you privately, for I am collecting my money as you see, so leave me (T. and he left me) until I have finished”; and so, when I had collected everything I had in Mecca and decided to leave, I met ‘Abbas and said, “Keep my story secret for three nights, then say what you will for I am afraid of being pursued.” When he said that he would, I said, “I left your brother’s son married to the daughter of their king, meaning Safiya, and Khaybar has been conquered and all that is in it removed and become the property of Muhammad and his companions.” He said, “What are you saying, Hajjaj?” —-
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৫১৯-৫২১ http://www.justislam.co.uk/images/Ibn%20Ishaq%20-%20Sirat%20Rasul%20Allah.pdf
[2] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮, ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৮৬-১৫৯০ http://books.google.com/books?id=sD8_ePcl1UoC&printsec=frontcover&source=gbs_ge_summary_r&cad=0#v=onepage&q&f=false
[3]“কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক: আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৭০২-৭০৫
ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩৪৫-৩৪৭
[4] হিজায: বর্তমান সৌদি আরবের পশ্চিম অঞ্চল। এটির সীমানা হলো: পশ্চিমে লোহিত সাগর, উত্তরে জর্ডান, পূর্বে নাজাদ ও দক্ষিণে আসির। এর প্রধান শহর হলো জেদ্দা, কিন্তু এই স্থানের বিশেষ পরিচিতি সম্ভবতঃ ইসলামের পবিত্র-ভূমি মক্কা ও মদিনা শহরের অবস্থান।
[5] Ibid “সিরাত রসুল আল্লাহ”- ইবনে হিশামের নোট নম্বর ৭৬৭, পৃষ্ঠা ৭৭০
[6] ইসলামে মিথ্যা ও প্রতারণা:
Leave a Reply