লিখেছেন : মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম
ইসলাম ধর্মমতে, মদ্যপান হারাম। আমি হাতের কাছে পেলে সংকোচ করি না।
ছবি আঁকা, বিশেষ করে মানুষ বা পশুপাখির ছবি আঁকা হারাম। আমি মানুষের ছবিই বেশী আঁকি।
গান বাজনা করা বা শোনা হারাম। শুধু বিনা বাদ্যযন্ত্রে আল্লাহ-রসুলের গুনগান করা যায়। আর আমি করি উল্টোটা। আর বেশীরভাগ সময় গান না শুনে শুধু মিউজিক শুনি।
নাটক সিনেমা কিংবা যাদু দেখা হারাম। আর যারা অভিনয় করে বা যাদু দেখায়, তারা বিনা বিচারে দোজখে চলে যাবে। আমি এটা মানি না। আমি জানি, সকল নবিই কিছু যাদুবিদ্যা বা মন্ত্র-তন্ত্রের মাধ্যমেই মানুষকে দলে ভেড়াতেন এবং ভেড়া বানিয়ে রাখতেন। আর যারা যাদু বা হাতসাফাইয়ে দক্ষ ছিলেন না, তারা নানান ধরনের অভিনয় করে গেছেন।
শুকর খাওয়া হারাম। আমি খেয়ে দেখেছি। ভালো না লাগায় বেশী খাই না। সিগারেট, ব্যাঙ বা কাঁকড়া খাওয়া হারাম না হলেও মাকরুহ বা নিষিদ্ধ। আমি এগুলো না মেনে যা ইচ্ছা, যত ইচ্ছা, খাই।
এজাতীয় আরো যতরকম নিষিদ্ধ কাজের তালিকা আছে, এর কোনটাই আমি মেনে চলি না, বরং আরো বেশি বেশি করে করার চেষ্টা করি। ৯০% বা ১০০% মুসলিমের দেশেও ৮০% মুসলিম এগুলো মানে না। কোরানে নাকি হাদিসে এসব বিধিনিষেধ আছে, তাও অনেকে জানে না। আর এসব নিষিদ্ধ কাজ করার কারণে ধর্ম অবমাননার কোন অভিযোগও কেউ করেনা। তাতে কারো কোন সমস্যাও হয় না। আর এই নিষিদ্ধ কাজগুলো করার ব্যপারে ধর্মীয় মতে বৈধতার প্রয়োজনও মনে করি না। যেগুলো মানা বা না মানার ব্যপারে নজরদারির জন্য কোন দৃশ্যমান কর্তৃপক্ষ থাকে না, সেগুলো মানার চেয়ে না মেনে উপহাস করতে করতে সভ্যতা এগিয়েছে।
তাহলে সেই অখ্যাত বয়াতি কেন রিমান্ডে? আমার কাছে তার অপরাধ মূলত দু’টি। তিনি গান বাজনা নিয়ে ছিলেন, তা নিয়ে থাকলেই হতো। এটা হালাল না হারাম, সেই হিসাব কেউ করতে যেত না। তিনি তার কাজের বৈধতা ধরৃমগ্রন্থে খুঁজতে গেছেন, এটাই তার প্রথম অপরাধ। তার দ্বিতীয় অপরাধ, তিনি মুফতি মওলানাদেরকে তো বটেই, কোরানে কি আছে আর কি নেই, তা জানার উসিলায় সাধারন পরোক্ষভাবে হলেও মানুষকেও কোরান পড়ে দেখতে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন। তা করলে মওলানাদের চাপাবাজি ধরা পড়ে যাবে। হুজুররা মন খুলে মিথ্যা গল্প বলতে পারবে না। সাধারণ মানুষও তখন ওয়াজ কিংবা আলোচনার সময় চ্যালেন্জ করে বসতে পারে। এই বিপদের আশংকা থেকে হুজুরদেরকে বাঁচাতেই বয়াতি সাহেব এখন রিমান্ডে।
আর সবকিছুর ওপরে আছে ধর্মকর্মের ব্যপারে রাষ্ট্রীয় সহায়তা। কারণ ধর্ম একটা সহজ ব্যবসা যার মূলধন হচ্ছে মানুষের অপরাধবোধ। ধর্মীয় বিধিনিষেধগুলো কোনকালেই কারো পক্ষেই সম্পূর্ণ মেনে চলা সম্ভব না। আর মেনে চলতে না পারার অক্ষমতাজনিত কারনে জনগন সবসময় একটা ভীতিকর অপরাধবোধে আচ্ছন্ন জীবন যাপন করতে থাকবে। তারা রাষ্ট্রের কাছে কোনকিছু দাবী করবে না। ন্যায়বিচারের দাবীও করবে না। বরং রাষ্ট্র যখন যাকে খুশী হেনস্তা করতে থাকবে। আর পরকালের ন্যায়বিচারের ভরসায় জনগনও উচ্চবাচ্য করবে না। এই সুবিধা থেকে কোন রাষ্ট্র কখনো বঞ্চিত থাকতে চাইবে কেন?
আবার কোরান ভলোভাবে বুঝে পড়তে শুরু করলে অর্ধেক মানুষ কোরানের বিধিনিষেধ মেনে চলতে গিয়ে জঙ্গি হয়ে জিহাদ করবে, আর বাকি অর্ধেক এর অসারতা বুঝে হয়ে যাবে নাস্তিক। এটা কি কোন সরকার কখনো চাইবে? প্রশ্নই আসে না। কাজেই বয়াতির মুক্তি আমি চাই না, আশাও করি না। আমি চাই, এই ফিতনার অবসান হোক। আল্লাহপাক আর গায়েবে চুপচাপ না থেকে প্রকাশ্যে বলে দিক – গানবাজনা হারাম কি না।
Leave a Reply