তখন প্রভু মোশীকে বললেন, ‘এখনই নেমে যাও, কারণ তোমার সেই জনগণ, যাদের তুমি মিশর দেশ থেকে এখানে এনেছ, তারা ভ্রষ্ট হয়েছে। আমি তাদের যে পথে চলবার আজ্ঞা দিয়েছি, সেই পথ ত্যাগ করতে তাদের তত দেরি হয়নি! তারা নিজেদের জন্য একটা ছাঁচে ঢালাই করা বাছুর তৈরি করে তার সামনে প্রণিপাত করেছে, তার উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করেছে, এবং বলেছে, ইস্রায়েল, এ-ই তোমার পরমেশ্বর, যিনি মিশর দেশ থেকে তোমাকে এখানে এনেছেন। [যাত্রাপুস্তক ৩২:৭-৮]
যখন আমি সেই প্রস্তরফলক দু’টোকে, তোমাদের সঙ্গে প্রভু যে সন্ধি স্থির করতে যাচ্ছিলেন সেই সন্ধির প্রস্তরফলক দু’টোকেই নেবার জন্য পর্বতে উঠেছিলাম, তখন চল্লিশদিন চল্লিশরাত পর্বতে থেকেছিলাম, রুটিও খাইনি, জলও পান করিনি। প্রভু আমাকে পরমেশ্বরের আঙুল দিয়ে লেখা সেই প্রস্তরফলক দু’টো দিয়েছিলেন, যার উপরে ছিল সেই সকল বাণী যা প্রভু জনসমাবেশের দিনে পর্বতের উপরে আগুনের মধ্যে থেকে তোমাদের উদ্দেশ করে বলেছিলেন। সেই চল্লিশদিন চল্লিশরাত শেষে প্রভু ওই প্রস্তরফলক দুটোকে, সন্ধির সেই লিপিফলক দু’টোকে আমাকে দেবার পর প্রভু আমাকে বললেনঃ ওঠ, এখান থেকে শীঘ্রই নেমে যাও, কারণ তোমার সেই জনগণ, যাদের তুমি মিশর থেকে বের করে এনেছ, তারা ভ্রষ্ট হয়েছে। আমি তাদের যে পথে চলবার আজ্ঞা দিয়েছি, সেই পথ ত্যাগ করতে তাদের তত দেরি হয় নি। তারা নিজেদের জন্য ছাঁচে ঢালাই-করা একটা প্রতিমা তৈরি করেছে। [দ্বিতীয় বিবরণ ৯:৯-১২]
শিবিরের কাছাকাছি হয়ে যেই দেখলেন সেই বাছুর ও সেই নাচ, ক্রোধে জ্বলে উঠে মোশী নিজের হাত থেকে সেই প্রস্তরফলক দু’টোকে নিক্ষেপ করে পর্বতের পাদতলে টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেললেন। তারপর তাদের তৈরি করা সেই বাছুর নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দিলেন, তা টুকরো টুকরো করে গুঁড়ো করলেন, এবং তার গুঁড়ো জলের উপরে ছড়িয়ে ইস্রায়েল সন্তানদের সেই জল জোর করে খাওয়ালেন। [যাত্রাপুস্তক ৩২:১৯-২০]
পরে মোশী আরোনকে বললেন, ‘এই লোকেরা তোমার কী করল যে, তুমি এদের উপরে এমন মহাপাপ ডেকে আনলে?’ আরোন উত্তরে বললেন, ‘আমার প্রভুর ক্রোধ জ্বলে না উঠুক। আপনি তো জানেন যে, এই জনগণ অমঙ্গলের প্রতি প্রবণ। তারা আমাকে বলল, আমাদের পুরোভাগে চলবেন এমন দেবতাকে আমাদের জন্য তৈরি কর, কেননা ওই যে মোশী মিশর দেশ থেকে আমাদের এখানে এনেছে, তার যে কী হল, তা আমরা জানি না।’ আর আমি তাদের বললাম, ‘তোমাদের মধ্যে যার যে সোনা আছে, সে তা খুলে দিক। আর তারা তা আমাকে দিলে আমি তা আগুনে ফেললাম আর এই বাছুরটা বেরিয়ে এল।’ যখন মোশী দেখলেন, জনগণ আর কোন বাধা মানছে না, যেহেতু আরোন তাদের যে কোন বাধা সরিয়ে দিয়েছিলেন, ফলে তারা তাদের শত্রুদের বিদ্রূপের বস্তু হয়েছিল। [যাত্রাপুস্তক ৩২:২১-২৫]
প্রভু মোশীকে আরও বললেন, ‘আমি এই জাতিকে লক্ষ্য করলাম; তারা সত্যি কঠিনমনা এক জাতি! এখন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও, যেন আমার ক্রোধ তাদের উপরে জ্বলে ওঠে ও আমি তাদের সংহার করি! আমি তোমাকেই এক মহান জাতি করব।’ মোশী তাঁর পরমেশ্বর প্রভুকে এই বলে প্রশমিত করতে চেষ্টা করলেন, ‘প্রভু, তোমার যে জনগণকে তুমি মহাপরাক্রম ও শক্তিশালী হাত দ্বারা মিশর দেশ থেকে বের করেছ, তাদের উপরে তোমার ক্রোধ কেন জ্বলে উঠবে? মিশরীয়েরা কেন বলবে: পার্বত্য অঞ্চলে তাদের বিনাশ করার জন্য ও পৃথিবীর বুক থেকে বিলুপ্ত করার জন্যই তিনি অমঙ্গলকর অভিপ্রায়ে তাদের বের করে এনেছেন! তুমি তোমার প্রচন্ড ক্রোধ সংবরণ কর; তুমি যে তোমার আপন জনগণের অমঙ্গল ঘটাতে চাও, তেমন সঙ্কল্প ছেড়ে দাও। [যাত্রাপুস্তক ৩২:৯-১২]
ওদিকে মূসা ফিরে এলেন তার জাতির কাছে ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ অবস্থায়। এসেই বললেন: ‘আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার বড়ই নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছো! তোমরা কি নিজেদের রবের হুকুমের অপেক্ষা করার মত এতটুকু সবরও করতে পারলে না?’ সে ফলকগুলো ছুঁড়ে দিল এবং নিজের ভাইয়ের ( হারুন ) মাথার চুল ধরে টেনে আনলো। হারুন বললো: ‘হে আমার সহোদর! এ লোকগুলো আমাকে দুর্বল করে ফেলেছিল এবং আমাকে হত্যা করার উপক্রম করেছিল। কাজেই তুমি শত্রুর কাছে আমাকে হাস্যাস্পদ করো না এবং আমাকে এ জালেম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করো না।’ তখন মূসা বললো: ‘হে আমার রব! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করো এবং তোমার অনুগ্রহের মধ্যে আমাদের দাখিল করে নাও, তুমি সবচাইতে বেশী অনুগ্রহকারী।’ (জওয়াবে বলা হলো) ‘যারা বাছুরকে মাবুদ বানিয়েছে তারা নিশ্চয়ই নিজেদের রবের ক্রোধের শিকার হবেই এবং দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছিত হবে। মিথ্যা রচনাকারীদেরকে আমি এমনি ধরণের শাস্তিই দিয়ে থাকি। [সূরা আরাফ ১৫০-১৫২]
Leave a Reply