লিখেছেন সাঈদুর রহমান
এবার বলছি, যে-কারণে আমি ফেরেশতা এবং রুহ তথা জীবরাঈলকে আলাদা করতে চেয়েছি। আয়াতগুলোর দিকে খেয়াল করুন: “বরং এটা মহান কোরআন, সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ” (কোরআন ৮৫:২১-২২); “আমরাই গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমরাই এর সংরক্ষক” (কোরআন ১৫:৯)।
এই আয়াতগুলোতে একটু নজর দিন। এখানে একটা কোরআনের কথা বলা হচ্ছে, যেটি কোথাও লিপিবদ্ধ করা আছে এবং কেউ এটাকে সংরক্ষণ করছেন। পাঠকরা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, ইসলামী ইতিহাস মতে – মুহাম্মদ তার জীবনকালে কোরআন সংরক্ষণ তো দূরের কথা, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আয়াতগুলোকে একত্র করারও কোনো উদ্যোগ নেননি। তার মৃত্যুর পরে খলিফা উসমান সেটা সংকলন শুরু করেন এবং লিখিত আকারে প্রকাশ করেন। যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে এখানে কোন কোরানকে সংরক্ষিত বলা হচ্ছে? এই কোরআনকে কারাই বা সংরক্ষণ করছে? বর্তমান কোরআনই বা কী তাহলে?
ইসলামী পণ্ডিতগণ বলে থাকেন, কোরআন সংরক্ষনের দায়িত্ব আল্লাহর এবং ওপরের আয়াতগুলোতে বর্তমানে যে-কোরআন প্রচলিত আছে, সেটার কথাই বলা হচ্ছে। আমি এই দাবিটাকে নাকোচ করছি। আমার অবস্থান হল, এই কোরানকে সংরক্ষিত করার দায়িত্ব রুহের কথা বোঝানো হয়েছে এবং তারা বর্তমান কোরআন নয়, বরং অন্য একটি (অরিজিনাল) কোরআন সংরক্ষনের কথা বলছিল এবং বর্তমানে যে-কোরআন প্রচলিত আছে, সেটার বেশির ভাগ কথা এই রুহের (জীবরাঈলের)।
আমার প্রথম দাবিটির পক্ষে যুক্তি খুঁজতে এই আয়াতগুলো খেয়াল করুন: “বলুন, একে রুহ পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিশ্চিত সত্যসহ নাযিল করেছেন, যাতে মুমিনদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এটা মুসলমানদের জন্যে পথ নির্দেশ ও সু-সংবাদ স্বরূপ” (কোরআন ১৬:১০২); “এর (কোরআন) সংরক্ষণ ও পাঠ আমাদেরই দায়িত্ব। অতঃপর আমরা যখন তা পাঠ করি, তখন আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন। এরপর বিশদ বর্ণনা আমাদেরই দায়িত্ব” (কোরআন ৭৫:১৭-১৯)।
আয়াতগুলো থেকে যা বোঝা যাচ্ছে, মুহাম্মদকে যে/যারা কোরআন পাঠ এবং বিশদ বর্ণনা করছিলেন, সে/তারাই সেটাকে সংরক্ষণ করার কথা বলছিল। পাঠকগণ যদি আমার আগের পয়েন্টের সাথে একমত হন, তাহলে সেটা রুহই করছিল। আর যদি না হন, তাহলেও এটি আল্লাহ না। মুহাম্মদকে তো আর আল্লাহ কোরআন পাঠ বা বিশদ বর্ণনা করে শোনাননি! তাহলে আল্লাহ কীভাবে এই কোরআন সংরক্ষক হল? সুতরাং ইসলামী পণ্ডিতদের এই দৃষ্টিভঙ্গি এবং দাবি একেবারেই অযৌক্তিক।
এবার আসা যাক পরের দাবিটিতে। এখানে প্রথম অংশে আমি দেখাতে চেষ্টা করব, বর্তমান কোরআন অরিজিনাল কোরআন নয়, যাকে আল্লার বাণী বলে দাবি করেছিল জীবরাঈল এবং যেমনটি করেন ইসলামি পণ্ডিতগণ। এই আয়াতটি খেয়াল করুন: “আমি একে আরবি ভাষায় কোরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার (কোরআন ১২:২; ৪৩:৩; ৫৪:১৭); স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, আরবি ভাষাভাষীর মানুষ যাতে কোরআন বুঝতে পারে, সেজন্য কোরআনকে আরবিতে করা হয়েছে। এর লুকানো অর্থ হল – অরিজিনাল কোরআন অন্য কোনো ভাষায় লেখা ছিল, যেটি আরবির কাছাকাছিই ছিল। তা না হলে আরবিতে সহজ করার কথা বলা হবে কেন?
এবার দেখা যাক, অরিজিনাল কোরআন নিয়ে বর্তমান কোরআন কী বলছে। পরের আয়াতগুলো খেয়াল করুন: “বরং এটা মহান কোরআন, সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ” (কোরআন ৮৫:২১-২২); “আলিফ-লা-ম-রা; এগুলো সুস্পষ্ট গ্রন্থের আয়াত” (কোরআন ১২:১); “ত্বা-সীন-মীম। এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত” (কোরআন ২৮:১-২); “ত্বা-সীন; এগুলো আল-কোরআনের আয়াত এবং আয়াত সুস্পষ্ট কিতাবের” (কোরআন ২৭:১)।
প্রথম আয়াতটিতে বলা হচ্ছে, “বরং এটা মহান কোরআন, সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ।” এটা এক সময়ের কথা হতে পারে, যখন জীবরাঈল মুহাম্মদকে সেই অরিজিনাল কোরআনের কথা শোনাচ্ছিল। তখন মুহাম্মদের মনে প্রশ্ন উঠেছিল, এগুলো কী এবং তারা কোথায় পেয়েছে? জবাবে জীবরাঈল মুহাম্মদকে ওউপরোক্ত আয়াতটি বলেছিল।
শেষের আয়াতটিতে বলা হচ্ছে, “ত্বা-সীন; এগুলো আল-কোরআনের আয়ত এবং আয়াত সুস্পষ্ট কিতাবের।” স্পষ্টতই এখানে দু’টি আলাদা কিতাবের কথা বলা হচ্ছে। অর্থাৎ এই দু’টি বর্তমান কোরআন এবং অরিজিনাল কোরআন। আর ত্ব-সীন দুটোতেই রয়েছে। অপরদিকে আলিফ-লাম-রা (কোরআন ১২:১) এটা অরিজিনাল কোরআন থেকে নেয়া। একইভাবে ত্ব-সীন-মীম (কোরআন ২৮:১-২)।
অরিজিনাল কোরআনে এইসব শব্দ এবং অর্থ থাকলেও আরবিতে নেই বিধায় বর্তমান কোরআনের লেখকেরা শুধু এগুলো উল্লেখই করে গেছেন।
(চলবে)
Leave a Reply