লিখেছেন পুতুল হক
৭১.
আমাদের বাসায় বাইশ-তেইশ বছরের একটা ছেলে আসে একটা কাজে। সে শিবিরের কর্মী। শিবির সম্পর্কে আমি ঐ ছেলেটার কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পারি। ছেলেটা খুব গান-পাগল। যতক্ষণ থাকে তাঁর মোবাইলে গান বাজে – বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি। একদিন বাজাচ্ছিল ওদের দলের ছেলেদের গাওয়া ইসলামিক গান। আমি খুব কৌতূহল নিয়ে শুনেছি। গানগুলোতে নামাজ-রোজা করার কথা বলা হয়, কিন্তু তাঁর চাইতে বেশি ছড়ানো হয় হিংসা, ঘৃণা। যারা সাধারণ শিক্ষা পায়, তাঁদেরকে ওরা বলে ‘শিক্ষিত শয়তান।’ শিক্ষিত শয়তান তারাই, যারা মুসলমান হয়েও দ্বীনী এলেম না নিয়ে ইহুদি-নাসারাদের দেয়া শিক্ষা নেয় এবং দুনিয়াদারীর কাজে মশগুল থাকে। এই শিক্ষিত শয়তানদের সম্পর্কে এতো ঘৃণা ছড়ানো হয় যে, আমি আঁতকে উঠেছিলাম, ওরা আমাদের সম্পর্কে কী ভাবে ভেবে। এরপর সব ক্ষোভ ঢালা হয় হিন্দু এবং ইহুদি-নাসারাদের ওপর। দশ লাইনের একটি গানের আট লাইন জুড়ে থাকে শিক্ষিত শয়তান, হিন্দু আর ইউরোপ-আমেরিকার প্রতি ঘৃণা। “মহানবীর অপমান করছে”, “ইসলাম নষ্ট করছে” ইত্যাদি বলে শিক্ষিত শয়তান আর বিধর্মীদেরকে ওদের জীবনের একমাত্র শত্রু বলে বর্ণনা করে। পৃথিবীতে এতো হানাহানির মূল কারণ এইসব বিধর্মী। এদের কারণে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়া থেকে দূরে সরে নানান পাপকর্ম করছে। পৃথিবীতে শান্তি ফেরাবার একটাই পথ, সেটা হচ্ছে – ইসলামের এই শত্রুদের শেষ করা।
৭২.
পরিবেশ দূষণের কারণে বর্ষা কালে বৃষ্টি নেই। মিকাইল এখানে অক্ষম।
৭৩.
পিরিতের পেত্নীও ভালো। ধর্মের সাথে যার প্রেম, তার চোখে ধর্ম রূপবতী, গুণবতী। প্রেমের বদনাম সহ্য করা প্রেমিকের পক্ষে সম্ভব না। মুসলমানদের পয়লা প্রেম মোহাম্মদ, দুসরা প্রেম আল্লাহ। তারা নিজের মা-বোনের নামে গালি সহ্য করতে পারে, কিন্তু নবীর নামে একটা কুকথা (নাকি সত্য কথা!) সহ্য করতে পারে না। কারো মধ্যে প্রেম থাকে সুপ্ত, আবার কারো মধ্যে থাকে সদা জাগ্রত। সুপ্ত প্রেমের ঘুম ভেঙে গেলেই কিন্তু সেটা জাগ্রত প্রেম।
৭৪.
তালেবান বা আইএস জিহাদি সংগঠন। পৃথিবীতে ইসলাম কায়েমের স্বপ্নে এ সমস্ত দল গঠন করা হয়। শুধুমাত্র সংগঠনের মুষ্টিমেয় কিছু সদস্যের স্বপ্নদোষে আইএস তৈরি হয় না। জিহাদি দলগুলোর প্রতি থাকে বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের মৌন সমর্থন। জিহাদি দলগুলোর মূল শক্তি – মুসলমানদের সমর্থন। ইসলামের আধুনিক অনুসারীরা বলে: “আইএস চাই না, তালেবান চাই না”, কিন্তু তারা কখনো বলে না: “জিহাদ চাই না, দারুল ইসলাম চাই না।” যতদিন পর্যন্ত বাসনা থাকবে জিহাদ আর দারুল ইসলামের, ততদিন পর্যন্ত ইসলামী জিহাদি তথা সন্ত্রাসী দল তৈরি হতে থাকবে। ভারতের মত বৃহৎ একটি হিন্দু অধ্যুষিত দেশ তিনদিক থেকে বাংলাদেশ ঘিরে রাখার পরেও পাকিস্তানের জন্য আমাদের পরান পোড়ে, যেখানে পাকিস্তানের সাথে রয়েছে আমাদের বেদনার তিক্ত অতীত। ভাষা, সংস্কৃতি, জলবায়ু, রুচি কোনোভাবেই আমরা পাকিস্তানের কাছাকাছি কেউ নই – একমাত্র ধর্ম ছাড়া। ধর্মের কারণে যেখানে আমরা বাপ-ভাইয়ের খুনিকে, মা-বোনের ধর্ষককে মাফ করে বুকে জড়িয়ে নিতে রাজি আছি, সেখানে কোথাকার কোন্ আইএস বা বোকো হারাম ক’টা মেয়েকে জোর করে ধরে নিয়ে যৌনদাসী বানালো কিংবা ক’টা মেয়েকে নিলামে বিক্রি করলো, সে খবরে আমাদের দেশের মুসলিমদের মনে জিহাদিদের সম্পর্কে ঘৃণা ধড়ফড় করে উঠবে – ভাবাটা হাস্যকর। জিহাদিদের কাফেরের কল্লা কাটার দৃশ্য নির্লিপ্ত মনে দেখে যায় মুসলিম, কারণ তারা জানে, মহত্তর আদর্শের প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু নিষ্ঠুরতা বরদাস্ত করা যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, মুসলমানের কাছে একমাত্র মহৎ আদর্শ ইসলাম। আর তাছাড়া কাফেরের কল্লা কাটাকে নিষ্ঠুরতা বলা যায় না, এটাকে বরং বলা যায় আদর্শ বাস্তবায়নের তরিকা। পৃথিবীর সব মানুষ ইসলামের দাওয়াত পাবে। কবুল করলে ভালো। আর না করলে কবুল করানোর তরিকা জানতে নিশ্চয়ই কারো বাকি নেই।
৭৫.
একসাথে দু’জন স্ত্রী থাকলে খুব সহজে সেই স্বামীকে বদমাশ বলে দেয়া যায়, কিন্তু একসাথে এগারোজন স্ত্রী রেখেও মোহাম্মদ আদর্শ মানব।
Leave a Reply