একবার পশু ইসলামী বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ পাখি লীগের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। এই দুই দলের কাছে দুইটি ব্যাবহারযোগ্য অস্ত্র ছিল। পশু ইসলামী বাংলাদেশ ছিল ইসলামের ধারক বাহক রক্ষক, তারা ইসলাম কায়েম করবে বলে ওয়াদা করেছিল। জনগনকে ইসলামের মুলো দেখিয়ে ক্রমশ মগজ ধোলাই করছিল, জনগনের কোমল ধর্মীয় অনুভূতিকে সুড়সুড়ি দিয়ে ভোট আদায় করছিল। তারাই বনে গিয়েছিল ধর্ম আর নৈতিকতার সোল এজেন্ট, নিজেদের দুর্নীতিমুক্ত দাবী করে তারা ধর্ম বেচে খাচ্ছিল। তারা বাংলাদেশ পাখি লীগকে ঘৃণা করতো। তার চাইতে বেশি ঘৃনা করতো বুদ্ধিজীবী বাদুর সংঘকে। পাখি লীগের সাথে যুদ্ধ চললেও তারা এক টেবিলে কৌশলগত মিত্রতা করতো, নেতারা নেতারা কোলাকুলি করতো, কিন্তু বুদ্ধিজীবী বাদুর সংঘ ছিল ভীষণ বেয়ারা। তারা পশু ইসলামী বাংলাদেশের শেকড় উপরে ফেলতে চাইছিল, ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যাবহারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাদের পেটে লাত্থি মারতে চাইছিল।
অন্যদিকে বাংলাদেশ পাখি লীগও একই কায়দায় জনগনের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করতো। সামান্য কিছু রাজাকার বাদে সকল বাঙালীই যে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, সেটা তারা ভুলেই গিয়েছিল। তারাই বনে গেল জঙ্গলে মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র সোল এজেন্ট, যত্রতত্র যাকে তাকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আর বিপক্ষের বলে ঘোষণা দিয়ে তারা রাজনৈতিক ফায়দা লোটা শুরু করেছিল। পশু ইসলামী বাংলাদেশ এবং ঘাতক দালালদের মূলো ঝুলিয়ে রেখে বারবার ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছিল। তারা পশু ইসলামী বাংলাদেশকে ঘৃনা করতো। তার চাইতে বেশি ঘৃনা করতো বুদ্ধিজীবি বাদুর সংঘকে। কারণ বাদুর সংঘ তাদের রাজনৈতিক সুবিধাবাদ এবং ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ খুলে দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে সারা জঙ্গলে সন্ত্রাস আর পাশের বড় জঙ্গলের দাদাদের খুশী করার জন্য জঙ্গলের স্বার্থ বিকিয়ে দেবার বিরোধীতা করেছিল।
এই পশু ইসলামী বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ পাখি লীগের মধ্যকার যুদ্ধে বাংলাদেশ পাখি লীগ বুদ্ধিজীবী বাদুর সংঘের সহযোগীতা চাইলো। বুদ্ধিজীবী বাদুর সংঘ বললো, “তোমরা তো সুবিধা মত পশু ইসলামী বাংলাদেশের সাথে কোলাকুলি করো। তোমরা ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের কথা বলো, অথচ মুক্তিযুদ্ধ কল্যান ট্রাস্টের নামে তোমাদের পান্ডারা সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করে, শত্রু সম্পত্তি আইনের নামে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করো। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির কথা বলে তোমাদের নেত্রী তজবি হিজাব পরে মক্কায় দৌড়ায়, ফতোয়াবাজদের সাথে চুক্তি করে, আবার ধর্মভিত্তিক রাজনীতি টিকিয়ে রাখে। আগে নিজেদের খাসলত ঠিক করো, যেই আদর্শের কথা বলো সেটা আসলে কি তা বোঝো, তারপরে এসো।”
অন্যদিকে পশু ইসলামী বাংলাদেশ বুদ্ধিজীবী বাদুর সংঘের কাছে আসলোই না। কারণ তারা জানে বুদ্ধিজীবী বাদুর সংঘের কাছে গেলেই কষে একটা থাপ্পর খেতে হবে। তাই তারা গেল জঙ্গী পশুদল বাংলাদেশ(জেপিবি), এবং বাঙলাদেশ জাতীয়তাবাদী পশুদলের কাছে।
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হলো। দুই দলের নেতাদের কিছু হলো না, নেতারা চেয়ারে বসে হুকুম দিলো, আর কিছু সাধারণ মানুষকে হত্যা করে দুই দল লাশ নিয়ে টানা হেচরা করতে লাগলো। মাদ্রাসা পড়ুয়া ধর্মের নামে মগজ ধোলাই করে দেয়া ছাত্ররা ক্ষুর চাপাতি হাতে সাধারণ মানুষের উপরে ঝাঁপিয়ে পরলো, সংখ্যালঘুদের ধর্ষন করলো, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সোল এজেন্টরা সাধারণ ছাত্রদের বোঝালো যে তারাই একমাত্র দেশপ্রেমিক।দেশকে রক্ষা করতে হলে মাদ্রাসা পড়ুয়া পাশের বাসার ছাত্রটিকে হত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। একই সাথে দেশের সাধারণ পাখিদেরকে পশুদের হাত থেকে রক্ষা করছে বলে সাধারন পাখিরা তাদের হুকুমের গোলাম, তাদের থেকে এটা সেটা ছিনিয়ে নেয়া তাদের জন্য জায়েজ। তারা সারা জঙ্গলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলো। নারী ধর্ষনের সেঞ্চুরী করে মিষ্টি বিতরণ করলো, ধর্ষণ শেষে ধর্ষিতা নারীটিকে স্বাধীনতা বিরোধী ছাগু বানিয়ে দিলো।
এক সময়ে যুদ্ধ থেমে গেল। পাখি লীগ পশু ইসলামী বাংলাদেশের কয়েকজন নেতাকে ফাসিতে খুলিয়ে পশুদের নির্বিঘ্নে রাজনীতি করার ক্লিনশিট দিয়ে দিলো। পাখি লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ যুদ্ধাপরাধীদের বাদ দিয়ে নতুন পশু ইসলামী বাংলাদেশ গঠনের আহবান জানালো। দুই দলের মধ্যে শান্তি ফিরে আসলো, তারা ঠিক করলো জঙ্গলটাকে দুই ভাগ করে নেবে। এক ভাগ ধর্ম বেচে খাবে, আরেকভাগ মুক্তিযুদ্ধ বেচে খাবে। তারা মিলে মিশে এমন ব্যবস্থা(শিক্ষা এবং অর্থনীতি) কায়েম করলো যাতে মাদ্রাসা থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার নিরিহ ছাত্রের মগজ ধোলাই করে পশু ইসলামী বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগ চালু থাকে, একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে মগজ ধোলাই করে পাখি লীগের কর্মীও বাড়ানো যায়। দুই দলে মারামারি করে মরবে সাধারণ লোক, আর তারা সেই লাশ নিয়ে আরো যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতে পারবে। তাদের ভেতরে কিছু নিয়ম বানানো হলো, একদল আরেকদলের ব্যাবসায় হাত দেবে না। এরপরে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো, এবং জঙ্গল শাসন করতে লাগলো।
অন্যদিকে বুদ্ধিজীবী বাদুর সংঘ এই সব দেখে হতাশায় দূরে চলে গেল। তারা পাখি লীগ আর পশু ইসলামী দুই দলকেই বয়কট করলো, কারোর সাথেই আর সম্পর্ক রাখলো না। তারা এই দুটো পক্ষেরই সমালোচনা করতে লাগলো, এবং দুই দল পরে একত্রিত হয়ে বাদুর সংঘকে জঙ্গলছাড়া করলো।
সেই জঙ্গল এর পরে আক্ষরিক অর্থেই জঙ্গলে পরিণত হয়ে গেল। কেউ আর জঙ্গলের পক্ষে থাকলো না। একপক্ষ পাশের জঙ্গল পাকিস্তানের কাছে দেশ বন্ধক দিলো, আরেকদল পাশের জঙ্গল ভারতের কাছে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিলো। প্রতিবাদ কে করবে? তারা তো আপোষের সাথেই সব কিছু করছে!
শেষমেষ জঙ্গলটার অর্ধেক ভারত, আর অর্ধেক পাকিস্তানে পরিণত হলো। সোনার বাঙলাদেশ আর রইলো না।
—আসিফ মহিউদ্দীন
Sunday, February 12, 2012 at 10:35am
Leave a Reply