লিখেছেন মুখফোড়
আদম মিষ্টান্নের হাঁড়িটি বিজ্ঞানিলের হস্তে ধরাইয়া দিয়া সুমধুর স্বরে কহিল, মিষ্টান্ন মিতরে জনা।
বিজ্ঞানিল তাহার রশ্মি নির্মিত বস্ত্রখণ্ডের পকেট হইতে কী একটি যন্ত্র বাহির করিয়া মিষ্টান্নের হাঁড়ির শালপাতার আবরণ সরাইয়া মিষ্টির গুণাগুণ পরীক্ষা করিয়া হাসিমুখে কহিল, আদম যে! কেমন আছ বন্ধু?
আদম মুখটিকে পলকে আঁধার করিয়া কহিল, ভাল থাকি কী করিয়া বন্ধু? ঈশ্বরের সরকার চতুর্দিক হইতে জীবন যৌবনের উপর আক্রমণ চালাইতেছে। ভাবিতেছি বনে যাব। এইখানে আর না।
বিজ্ঞানিল একটি মিষ্টি কাঠিতে গাঁথিয়া মুখে পুরিয়া কহিল, অহো, বড় সুস্বাদু! কোন ময়রার দোকান হইতে কিনিলে?
আদম কহিল, ময়রার দোকান থেকে মিষ্টি খরিদ করিয়া তোমাকে খাওয়াইব? আমি কিনিয়াছি একটি গাভী, আর কয়েকটি ইক্ষুদণ্ড। গাভীর দুধ দোয়াইয়া ইক্ষু নিংড়াইয়া নিজের হস্তে মিষ্টি পাকাইয়াছি বন্ধু!
বিজ্ঞানিল চপচপ মিষ্টি খাইতে খাইতে কহিল, তা কী কারণে আজ আমি তোমার বন্ধু বটিলাম?
আদম বিগলিতহাস্যে কহিল, তুমি যে ঈশ্বর কণা বানাইয়া বসিয়াছ বন্ধু!
বিজ্ঞানিল ভ্রু নাচাইয়া কহিল, হাঁ! যদিও সে একটি কণা মাত্র, কিন্তু সবুর কর। ছোট বালুকার কণা বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল! এইরকম আরও কিছু কণা বানাইয়া অচিরেই একটি বনসাই ঈশ্বর গড়িয়া ফেলিব!
আদম কহিল, ঈশ্বরের দরবার হইতেই আসিতেছি। বুঢ়া ভয়ানক টেনশনে পড়িয়া গেছে। গিবরিলকে দিয়া ওজন মাপাইতেছে শুধু।
বিজ্ঞানিল কহিল, ওজন মাপাইতেছে কেন?
আদম কহিল, পরীক্ষা করিয়া দেখিতেছে তাহার শরীরের কোনও কণা চুরি হইয়াছে কি না।
বিজ্ঞানিল অট্টহাস্য করিয়া কহিল, বনসাই ঈশ্বরটি বানাইয়া ভাবিতেছি মোড়কে মুড়িয়া বুঢ়াকে উপহার দিব!
আদম গলা খাঁকরাইয়া কহিল, তা বিজ্ঞানিল তুমি এইসব ফালতু গবেষণা যন্তরমন্তর ছাড়িয়া কিছু কাজের গবেষণা কর না কেন?
বিজ্ঞানিল চটিয়া কহিল, ফালতু? ঈশ্বর কণা ফালতু?
আদম গলা নামাইয়া কহিল, এক ঈশ্বরের যন্ত্রণাতেই বাঁচি না বাপু, দেড়খানা হাজির হইলে লাভ কী?
বিজ্ঞানিল কহিল, সে তুমি বুঝিবে না। বিজ্ঞানের লীলা তোমার ন্যায় মৃত্তিকানির্মিত আদম বুঝিলে ত হইতই।
আদম কহিল, ইয়ে, তুমি ঈভ কণা নির্মাণে মনোযোগ দিতেছ না কেন?
বিজ্ঞানিল কহিল, ঈভ কণা? সে আবার কী?
আদম কহিল, ঈশ্বর কণার ন্যায়, কিন্তু ধর গিয়া, যাহা ক্রমশ জমাইয়া আরেকটি ঈভ নির্মাণ করা যাইবে? বিন্দু হইতে সিন্ধু আর কী।
বিজ্ঞানিল সন্দিগ্ধ নয়নে আদমকে পর্যবেক্ষণ করিয়া কহিল, আরেকটি ঈভ নির্মাণ করিলে কী ঘটিবে?
আদম বেজার হইয়া কহিল, ঈভ বড় দুষ্ট হে বিজ্ঞানিল। তাহার সহিত বহুদিন যাবত সুবিধা করিতে পারিতেছি না। আরেকটি ঈভ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে নির্মাণ করা গেলে সুখে শান্তিতে সংসার করিতাম ভাইটু।
বিজ্ঞানিল চিন্তিত মুখে আরেকটি মিষ্টি মুখে পুরিয়া কহিল, ঈভ নির্মাণের জন্য এত খাটিয়া প্রোটনে প্রোটনে ঠুক্কি মারিয়া ঈভ কণা উৎপাদন কি ইনটেলিজেন্ট ডিজাইন হইবে? তুমি ঈশ্বরের কাছে গিয়া বল না কেন? তোমার তো এন্তার পঞ্জরাস্থি বেকার পড়িয়া আছে। ঈশ্বরকে বলিলেই তিনি আরেকটি পঞ্জরাস্থি খুলিয়া নতুন ঈভ গড়িয়া দিবেন। খরচ কম পড়িবে।
আদম ভয়ানক চটিয়া কহিল, হাঁ হাঁ, পঞ্জরাস্থি হইতে কী মাল নির্মাণ হয় তাহা দেখিতেছি এত বৎসর ধরিয়া। পঞ্জরাস্থি হইতেই যদি ঈভ বানাইব তবে তুই বিজ্ঞানিল আছিস কী উৎপাটন করিতে? ইনটেলিজেন্ট ডিজাইন মারাইতেছিস হাবুল কোথাকার!
বিজ্ঞানিল আদমকে বিজ্ঞান বুঝাইতে প্রবৃত্ত হইল, কিন্তু আদম তাহার কথা কানে না তুলিয়া মিষ্টান্নের হাঁড়িটি অবশিষ্ট মিষ্টান্নসহ ছিনাইয়া লইয়া বিজ্ঞানিলের বাটী ত্যাগ করিল।
Leave a Reply