১. আবদুর রহমান বিন আবি লায়লা বর্ণনা করলেন: “উম হানি ছাড়া আর কেউই আল্লাহর রসূলকে জুহার (দুহা) নামায পড়তে দেখেনি। উনি (উম হানি) বললেন: “মক্কা বিজয়ের দিন আল্লাহর রসূল তাঁর গৃহে (উম হানির গৃহে) ঢুকলেন। তারপর তিনি গোসল করলেন এবং ঐচ্ছিক আট রাকাত নামায পড়লেন। তিনি নবীকে এত লঘুভাবে আর কোনোদিন নামায পড়তে দেখেননি। কিন্তু তিনি রুকু (মাথা নত করা) ও সিজদা (স্যাষ্ঠাঙ্গ করা) ঠিক মতই করলেন। (সহিহ) (জামি আত তিরমিজি, খণ্ড ১, হাদিস নম্বর ৪৭৪, পৃঃ ৪৭৬-৪৭৭; অনুবাদ লেখকের)
২. উম হানি বললেন: মক্কা বিজয়ের সময় আমি আল্লাহর রসূলের কাছে গেলাম। আমি দেখলাম, তিনি গোসল করছেন। আর ফাতেমা তাঁকে একটা কাপড় দিয়ে তাঁকে অন্তরাল করে রেখেছেন। আমি তাঁকে সালাম জানালাম। তিনি বললেন: “এ কে?” আমি বললাম, “আমি উম হানি।” তিনি বললেন: “স্বাগতম উম হানি।” (সহিহ) (জামি আত তিরমিজি, খণ্ড ৫, হাদিস নম্বর ২৭৩৪, পৃঃ ১১৭; অনুবাদ লেখকের)
১. আবদুল্লাহ ইব্ন মুসলিম (র) … উম্মে হানি বিনত আবু তালিব (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ-এর কাছে গিয়ে তাঁকে গোসল-রত অবস্থায় দেখলাম, ফাতিমা (রা) তাঁকে পর্দা করে রেখেছিলেন। রাসূলুল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেন: ইনি কে? আমি বললাম: আমি উম্মে হানি। (বুখারী শরীফ, হাদিস ১.২৭৬, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
২. ইসমা’ঈল ইবন্ আবু উওয়ায়স (রঃ)…উম্মে হানি বিন্ত আবু তালিব (রাঃ) বলেন: আমি বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ-এর কাছে গিয়ে দেখলাম যে, তিনি গোসল করছেন আর তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করে রেখেছে। তিনি বলেন: আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: এ কে? আমি উত্তর দিলাম: আমি উম্মে হানি বিনত আবু তালিব। তিনি বললেন: মারহাবা, হে উম্মে হানি! গোসল করার পর তিনি এক কাপড় জড়িয়ে আট রাক’আত সালাত আদায় করলেন। সালাত আদায় শেষ করলে তাঁকে আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ। আমার সহদর ভাই [আলী ইব্ন আবূ তালিব (রাঃ)] এক লোককে হত্যা করতে চায়, অথচ আমি লোকটিকে আশ্রয় দিয়েছি। সে লোকটি হুবায়রার ছেলে অমুক। তখন রাসূলুল্লাহ বললেন: হে উম্মে হানি! তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমিও তাকে আশ্রয় দিলাম। উম্মে হানি (রাঃ) বলেন: তখন ছিল চাশতের সময়। (বুখারী শরীফ, হাদিস ১.৩৫০, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
৩. হাফ্স ইব্ন উমর (র.)……ইব্ন লায়লা (র.) থেকে বর্ণিত, উম্মে হানি (রা.) ব্যতীত অন্য কেউ নবী করীম (স.) কে সালাতুয্ যুহা (পূর্বাহ্ন এর সালাত) আদায় করতে দেখেছেন বলে আমাদের জানাননি। তিনি (উম্মে হানি) (রা.) বলেন নবী (স.) মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর ঘরে গোসল করার পর আট রাকা’আত সালাত আদায় করেছেন। আমি তাঁকে এর চাইতে সংক্ষিপ্ত কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি, তবে তিনি রুকু’ ও সিজদা পুর্ণভাবে আদায় করেছিলেন। লায়স (র.) আমির (ইব্ন রাবীআ’) (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (স.) কে রাতের বেলা সফরে বাহনের পিঠে বাহনের গতিমুখী হয়ে নফল সালাত আদায় করতে দেখেছেন। (বুখারী শরীফ, হাদিস ২.১০৪০, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
৪. আদম (র.)……আবদুর রহমান ইব্ন লায়লা (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন উম্মে হানি (র.) (নবী করীম (স.)-এর চাচাত বোন) ব্যতিত অন্য কেউ নবী করীম কে চাশ্তের সালাত আদায় করতে দেখেছেন, এরূপ আমাদের কাছে কেউ বর্ণনা করেননি। তিনি উম্মে হানি (র.) অবশ্য বলেছেন, নবী করীম (স.) মক্কা বিজয়ের দিন (পূর্বাহ্নে) তাঁর ঘরে গিয়ে গোসল করেছেন। (তিনি বলেছেন) যে, আমি আর কখনো (তাঁকে) অনুরূপ সংক্ষিপ্ত সালাত (আদায় করতে) দেখিনি। তবে কিরআত সংক্ষিপ্ত হলেও তিনি রুকু’ ও সিজদা পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করেছিলেন। (বুখারী শরীফ, হাদিস ২.১১০৬, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
১. উম হানি বিন্ত আবু তালিব বর্ণনা করলেন: সেই দিনটি ছিল মক্কা বিজয়ের দিন। উনি (উম হানি) আল্লাহর রসূলের (সঃ) নিকট গেলেন। তখন তিনি (রসূল) নগরের এক উঁচু অংশে অবস্থান করছিলেন। আল্লাহর রসূল গোসল করতে উঠলেন। ফাতেমা একটা কাপড় দিয়ে তাঁকে ঘিরে রাখলেন। তারপর তিনি নিজের কাপড় নিলেন এবং নিজেকে আবৃত করে ফেললেন। এরপর নবী আট রাকাতের পূর্বাহ্ণের নামায পড়লেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ০৬৬৪; অনুবাদ লেখকের)
২. আবু তালিব তনয়া উম হানির মুক্ত ক্রীতদাস আবু মুরা বলেছেন। উম হানি বললেন: যেদিন মক্কা দখল হয় সেদিন আমি আল্লাহর রসূলের (সঃ) কাছে গেলাম। আমি দেখলাম তিনি গোসল করছেন আর ফাতেমা তাঁকে এক কাপড়ের সাহায্যে পর্দা দিচ্ছেন। আমি সালাম জানালাম। উনি বললেন: এ কে? আমি জবাব দিলাম: আমি উম হানি, আবু তালিবের কন্যা। গোসল শেষ হলে তিনি নিজেকে এক টুকরো কাপড়ে জড়িয়ে নিলেন এবং আট রাকাত নামায আদায় করলেন। নামায শেষ হলে তিনি পেছনে তাকালেন। আমি বললাম: আল্লাহর রসূল, আমার মায়ের পুত্র আলী বিন আবু তালিব ফুলান বিন হুবায়রাকে হত্যা করতে প্রস্তুত। এদিকে আমি ফুলানকে আশ্রয় দিয়েছি। এই কথা শুনে আল্লাহর রসূল বললেন: ও উম হানি, আমরাও তাকে রক্ষা করব, যাকে তুমি রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছ। উম হানি বললেন তখন ছিল পূর্বাহ্ণ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৫৫৫; অনুবাদ লেখকের)
আবদুল্লাহ বিন হারিস বিন নৌফল বর্ণনা করলেন: আমি এক ব্যাপারে অনেককেই জিজ্ঞাসা করছি। আল্লাহর রসূল কি পূর্বাহ্ণের নামায আদায় করেছেন? কিন্তু আবু তালিবের কন্যা উম হানি ছাড়া কেউই এ ব্যাপারে জানাতে পারেনি। উম হানি বললেন: মক্কা বিজয়ের দিন আল্লাহর রসূল (স.) আমাদের গৃহে আসলেন। তখন সূর্য যথেষ্ট উঠে গেছে। এক টুকরা কাপড় দিয়ে তাঁর নিভৃতে গোসল করার ব্যবস্থা করা হল। তিনি গোসল করলেন এবং নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হলেন। আট রাকাত নামায পড়লেন। আমি ঠিক বলতে পারি না তাঁর রুকু এবং সিজদা কি একই সময়ের ছিল কি না। উম হানি আরও বললেন: এর আগে আমি তাঁকে আর কখনো এই নফল (ঐচ্ছিক) নামায পড়তে দেখিনি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৫৫৪; অনুবাদ লেখকের)
মক্কা বিজয়ের দিনে উম হানির দুই দেবর তাঁর গৃহে আশ্রয় নেন। সেই সময় উম হানির স্বামী গৃহে ছিলেন না।
তারা বলল: উম হানি বিন আবু তালিব বিবাহ করেন হুবায়রা বিন আবি ওহব আল মাখযুমিকে। মক্কা বিজয়ের দিনে উম হানির দুই দেবর আবদুল্লাহ বিন আবি রাবিইয়া আল মাখযুমি এবং আল হারিস বিন হিশাম উম হানির কাছে এসে নিরাপত্তা চাইল। তারা বলল: “আমরা কি আপনার কাছে নিরাপদ থাকব?” উম হানি উত্তর দিলেন; “হাঁ, আপনারা আমার নিকট নিরাপদেই থাকবেন।” উম হানি আরও বললেন: “তারা দুজন আমার কাছেই ছিল, এমন সময় আমি দেখলাম লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত আলী ধীরে ঘোড়ায় চড়ে আমার গৃহে ঢুকলেন। বর্মে ঢাকা থাকার জন্য আমি আলীকে চিনতে পারি নাই। আমি বললাম; “আমি হচ্ছি নবীর চাচার কন্যা।” তারপর আলী তাঁর মুখ দেখালেন। আমি তখন তাঁকে দেখে বলে উঠলাম: “এ যে আলী, আমার ভাই!” আমি আলীকে অভ্যর্থনা জানালাম এবং আলিঙ্গন করলাম। কিন্তু আলী ঐ দুই ব্যক্তির দিকে তাকালেন আর তরবারি উঁচিয়ে নিলেন। আমি বলে উঠলাম: “এরা আমার নিজের লোক। তুমি এদের প্রতি নির্দয় হবে না।” তারপর আমি ঐ দু’জনের দিকে একটা জামা ছুড়ে দিলাম। তখন আলী বললেন: “তুমি কি অবিশ্বাসীদের আশ্রয় দিয়েছ?” এর পর আমি আলী ও তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং বললাম: “আল্লাহর কসম, তুমি যদি এদেরকে হত্যা করতে চাও তবে আমাকে দিয়ে শুরু কর।” উম হানি বললেন: “তখন আলী বাইরে চলে গেলেন, আর আমি তৎক্ষণাৎ গৃহে তালা লাগিয়ে দিলাম আর ওদেরকে বললাম: “তোমরা ভীত হবে না।”‘
Leave a Reply